অশ্লীলতার বিরুদ্ধে যাত্রাগান

নীলফামারীর বোর্ডের বাজারে গত শুক্রবার রাতে পরিবেশিত ‘জীবননদীর তীরে’ যাত্রাপালার একটি দৃশ্য l প্রথম আলো
নীলফামারীর বোর্ডের বাজারে গত শুক্রবার রাতে পরিবেশিত ‘জীবননদীর তীরে’ যাত্রাপালার একটি দৃশ্য l প্রথম আলো

আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে এবং অশ্লীলতার কারণে হারাতে বসেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য যাত্রাগান। এতে ওই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের চলছে দুর্দিন। দুর্দিন ঘোচাতে নীলফামারীতে ছয় দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো অশ্লীলতার বিরুদ্ধে যাত্রাগান।

জেলা যাত্রা ফেডারেশনের আয়োজনে জেলা সদরের খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের বোর্ডের বাজারে ছয় দিনের ওই যাত্রাগান গত শুক্রবার রাতে শেষ হয়েছে। অশ্লীলতা পরিহার করে যাত্রায় নাচ, গান, নাটক সবই ছিল।

জেলা যাত্রা ফেডারেশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. মোকছেদ আলী বলেন, ‘যাত্রা মানে অশ্লীলতা নয়, যাত্রাগানে বিনোদনের পাশাপাশি শিক্ষণীয় বিষয় আছে। অশ্লীলতার কারণে অনেক মানুষ যাত্রা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। অশ্লীলতা ও বিশৃঙ্খলার কারণে প্রশাসন যাত্রাগানের অনুমতি দিতে চায় না। আজ এ শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। গ্রামবাংলার এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা অশ্লীলতার বিরুদ্ধে যাত্রাপালা শুরু করেছি। স্থানীয় ব্যক্তিদের সহযোগিতায় আমরা সফলভাবে ছয় দিনের যাত্রা অনুষ্ঠান শেষ করতে পেরেছি। প্রতিদিন এখানে পাঁচ সহস্রাধিক সব বয়সের নারী-পুরুষ দর্শকশ্রোতাকে আমরা বিনা টিকিটে এই বিনোদন দিতে পেরেছি।’

আট বছর ধরে যাত্রাশিল্পের সঙ্গে যুক্ত সীমা বেগম (২৫) বলেন, ‘অশ্লীলতা আমাদের ভালো লাগে না। এখানে গত ছয় দিনে যে যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে কোনো অশ্লীলতা ছিল না। তারপরও এখানে দর্শকশ্রোতা অনেক বেশি ছিল। অশ্লীলতা ছাড়াও যাত্রা হতে পারে, তার এটাই বড় উদাহরণ।’

সেখানে যাত্রাপালাটি হচ্ছিল স্বপ্না অপেরার। স্বপ্না অপেরার স্বত্বাধিকারী মানিক চন্দ্র রায় বলেন, ‘বছরে ছয় মাস যাত্রা হয়। কিন্তু যাত্রাগানে অশ্লীলতা এমন পর্যায়ে গেছে যে যাত্রাগানের কথা শুনলে প্রশাসন অনুমতি দিতে চায় না। এ কারণে দিনে পর দিন শিল্পীদের বসিয়ে রেখে খাওয়াতে হয়। ফলে প্রতিবছর লক্ষাধিক টাকা লোকসান গুনতে হয়। জেলা যাত্রা ফেডারেশন যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আমরা চাই, গ্রামবাংলার ঐতিহ্য যাত্রা আবার তার হারানো গৌরব ফিরে পাক।’

খোকশাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান প্রধান বলেন, ‘আমরা দল–মতনির্বিশেষে একটি কমিটি করি। ওই কমিটির ১০০ জন সদস্য ৫০০ টাকা করে এককালীন প্রদান করেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিনা টিকিটে যাত্রা দেখার ব্যবস্থা করি। এর বাইরে কিছু চেয়ার রাখা হয়। কোনো দর্শক চেয়ারে বসে যাত্রা দেখতে চাইলে তাঁর খুশিমতো যা দেয়, তা–ই নেওয়া হয়। চেয়ারের ভাড়া এবং আমাদের এককালীন জমা করা টাকা দিয়ে আমরা শিল্পীদের খরচসহ আনুষঙ্গিক খরচ মেটাই।’

এই যাত্রা আয়োজনে প্রশাসনের অনুমতির প্রয়োজন হয়েছিল কি না, তা জানতে চাইলে বদিউজ্জামান বলেন, ‘আমরা প্রশাসনকে অবগত করেছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় স্থানীয় ব্যক্তিরা ভূমিকা পালন করায় পুলিশ প্রশাসনের প্রয়োজন হয়নি। কোনো বিশৃঙ্খলাও ঘটেনি।’