কমেছে পাসের হার ও জিপিএ-৫

পাসের হারের দিক দিয়ে সিলেট শিক্ষা বোর্ড সারা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। তবে গতবারের চেয়ে এবার পাসের হার যেমন কমেছে, তেমনি কমেছে জিপিএ-৫ও। এরপরও শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের সার্বিক ফলাফলের তুলনায় সিলেট বোর্ড অনেক ইতিবাচক ফল করেছে।
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার বোর্ডের পাসের হার ৭৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৩৫৬ জন শিক্ষার্থী। গতবার পাসের হার ছিল ৭৯ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ২ হাজার ৭০ জন। এবার বোর্ডে ৫৭ হাজার ৭০২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছেন ৪৩ হাজার ২৮ জন।
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আবদুল মান্নান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা দেশের তুলনায় আমাদের ফল সন্তোষজনক। তবে মানবিকে অকৃতকার্যের সংখ্যা বেশি হওয়ায় পাসের হারের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়েছে। এর বাইরে ইংরেজি প্রথম পত্রের প্রশ্নও একটু কঠিন হয়েছিল। এতেও সার্বিক ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে সব মিলিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। ভবিষ্যতে আরও ভালো ফলের প্রত্যাশা নিশ্চয়ই আমাদের থাকবে।’
খারাপ ফলের পেছনে যুক্তিবিদ্যা: মানবিক ও ব্যবসায় অনুষদ বিভাগ থেকে এবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ৩৯ হাজার ৩৪৫ জন পরীক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থীর আবশ্যিক ও ঐচ্ছিক বিষয় ছিল যুক্তিবিদ্যা। এ বিষয়ে পাস করেছে ৭২ দশমিক ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী। সার্বিক ফলাফলে এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে বোর্ডের ফলাফল-সংশ্লিষ্ট শাখা নিশ্চিত করেছে। এ বিষয় ছাড়া ইংরেজি বিষয়ে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং গণিতে ৮৪ শতাংশ। এ পরিসংখ্যানও নেতিবাচক ফলাফলের অন্যতম কারণ।
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ কে এম গোলাম কিবরিয়া তাপাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তিবিদ্যা বিষয়ে অতীতে এত খারাপ ফল কখনো হয়নি। এটি সার্বিক ফলাফলকে বিপর্যস্ত করেছে। এর বাইরে এবার থেকেই আবশ্যিক বিষয় হিসেবে নতুন যুক্ত হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়টি। এ বিষয়টি সব শিক্ষার্থীর বাধ্যতামূলক যুক্ত হওয়ায় প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থীদের একটু সমস্যা হয়েছে। এতে ফল তুলনামূলক খারাপ হওয়ায় জিপিএ-৫ও কমেছে।’
শিক্ষকদের সৃজনশীল পদ্ধতি নিয়ে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের স্বল্পতাকে ভালো ফলের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা বলে মন্তব্য করেছেন বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনো শিক্ষকদের পর্যাপ্ত মাত্রায় সৃজনশীল পদ্ধতি নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এতে করে শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের যথার্থভাবে পাঠদান দিতে পারছেন না।
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা: ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত টানা তিন বছর সিলেট শিক্ষা বোর্ডে বাণিজ্য বিভাগ সবচেয়ে ভালো ফল করে। বিজ্ঞান কিংবা মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা পাল্লা দিয়ে বাণিজ্য বিভাগের সঙ্গে পেরে ওঠেনি। তবে ২০১৪ সালে এসে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ছাপিয়ে যায় বাণিজ্য বিভাগকে। সেই একই ধারাবাহিকতা এবারও অক্ষুণ্ন রেখেছেন বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা।
এবার বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৮৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যা বোর্ডের মোট পাসের হারের চেয়ে ১৪ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি। গতবার বিজ্ঞানে পাসের হার ছিল ৮৮ দশমিক চার শতাংশ। এ বছর বাণিজ্য বিভাগের পাসের হার ৭৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ, গতবার যা ছিল ৮৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এ বছর মানবিক বিভাগের পাসের হার ৭০ দশমিক ৬৪ শতাংশ, গতবার যা ছিল ৭৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
মেয়েরা এগিয়ে: ছেলেদের চেয়ে তুলনামূলক মেয়েরা ভালো ফল করেছে। পাসের হারের দিক দিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে ছেলেরা কিছুটা এগিয়ে থাকলেও মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা ভালো ফল করেছে। বিজ্ঞানে এবার পাসের হার ৮৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এর মধ্যে ছেলেদের পাসের হার ৮৯ দশমিক ৪৩ এবং মেয়েদের ৮৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। মানবিকে পাসের হার ৭০ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এর মধ্যে ছেলেদের পাসের হার ৬৭ দশমিক ৯৯ এবং মেয়েদের ৭২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। বাণিজ্যে পাসের হার ৭৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এর মধ্যে ছেলেদের পাসের হার ৭৮ দশমিক ৯৩ এবং মেয়েদের ৮০ দশমিক ৭ শতাংশ।
তবে এবার জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলেদের আধিক্যই বেশি। বোর্ডে ১ হাজার ৩৫৬ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এর মধ্যে ছেলে ৭৯৮ এবং মেয়ে ৫৫৮ জন।