ইউপিডিএফ নেতাকে তুলে নিয়ে হত্যা

বাসার সামনে থেকে তুলে নিয়ে দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করেছে পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় সংগঠক (নেতা) মিঠুন চাকমাকে (৪০)। গতকাল বুধবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে খাগড়াছড়ি শহরের পানখাইয়াপাড়ার স্লুইসগেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)কে দায়ী করেছেন ইউপিডিএফের নেতা-কর্মীরা।

মিঠুনের ছোট ভাই বাগিশ চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সকালে একটি মামলার হাজিরা দিতে খাগড়াছড়ি আদালতে যান মিঠুন। আদালত থেকে ফিরে দুপুর ১২টার দিকে শহরের গোলাবাড়ি অপর্ণা চৌধুরীপাড়ায় বাসার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে দুই ভাই কথা বলছিলেন। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে করে চারজন অস্ত্রধারী জোর করে মিঠুনকে একটি মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায়। ভাইকে বাঁচানোর জন্য অস্ত্রধারীদের পেছনে ছুটতে থাকেন তিনি। পরে অপর্ণা চৌধুরীপাড়া থেকে এক কিলোমিটার দূরে স্লুইসগেট এলাকায় মিঠুনকে গুলি করে রাস্তায় ফেলে দেয় সন্ত্রাসীরা।

খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসক ধনিষ্ঠা চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই মিঠুনের মৃত্যু হয়। তাঁর মাথায়, হাতে ও বুকে ছয়টি গুলি লেগেছে।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারেক মো. আবদুল হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, গুলির সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে যান তাঁরা। এরপর শহর ও আশপাশের এলাকায় সংঘাত এড়াতে পুলিশি টহল জোরদার করেন তাঁরা। সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে।

মিঠুন এক যুগ আগে ইউপিডিএফ নেতৃত্বাধীন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেন। তাঁর এক সন্তান রয়েছে।

মিঠুন হত্যাকাণ্ডের পর খাগড়াছড়ি শহরে উত্তেজনা দেখা দেওয়ায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়। সন্ধ্যায় ইউপিডিএফ সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

ইউপিডিএফ ছেড়ে কিছু নেতা-কর্মী গত ১৫ নভেম্বর ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে নতুন দল গঠনের ঘোষণা দেন। তপন জ্যোতি চাকমাকে আহ্বায়ক করে তাঁর নেতৃত্বে গঠন করা হয় নতুন এই দল। ইউপিডিএফ তাদের ‘নব্য মুখোশ বাহিনী’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রতিরোধের ডাক দেয়। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তির বিরোধিতা করে ইউপিডিএফ গঠন করা হয়। গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফ গঠনের প্রতিবাদে তিন পার্বত্য জেলায় গত ১৬ নভেম্বর সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে ইউপিডিএফ। দল ভেঙে যাওয়ার পর খাগড়াছড়িতে প্রথম হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন মিঠুন চাকমা। এর আগে গত ৫ ও ১৫ ডিসেম্বর রাঙামাটিতে দুজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

ইউপিডিএফের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নিরণ চাকমা মিঠুন হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তাঁর দাবি, নব্য মুখোশ বাহিনীর সন্ত্রাসীদের হাতে মিঠুন নিহত হয়েছেন।

এ ব্যাপারে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)–এর কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দলের দুই সংগঠকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু দুই নেতার ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

মিঠুন চাকমা হত্যার নিন্দা জানিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। গতকাল রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।