পাঁচ বছরেও চালু হয়নি অন্তর্বিভাগ

তালাবদ্ধ কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষ
তালাবদ্ধ কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষ

কামরাঙ্গীরচরের ৩১ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালের নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১২ সালে। এরপর সেখানে বহির্বিভাগ চালু করা হয়। কিন্তু এখনো চালু হয়নি অন্তর্বিভাগ। এতে কামরাঙ্গীরচরের মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

হাসপাতালটির বহির্বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করে জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়। পুরোদমে হাসপাতালটি কবে চালু হবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য জানে না সিভিল সার্জন কার্যালয়ও।

সিভিল সার্জন এহসানুল করীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কর্মচারী নিয়োগ ও বাজেট বরাদ্দ চেয়ে অর্থ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি আবেদন করা হয়েছে। অনুমোদন পাওয়ার পর নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করে ইনডোর চালু করা যাবে।’

কামরাঙ্গীরচরের কুড়ারঘাটে এই হাসপাতালের অবস্থান। হাসপাতালের তিনতলা ভবনের নিচতলার কয়েকটি কক্ষে সীমিত পরিসরে চলছে বহির্বিভাগের কাজ। অন্তর্বিভাগ (ইনডোর) চালু না হওয়ায় অপারেশন থিয়েটারসহ গুরুত্বপূর্ণ কক্ষগুলোতে জমেছে ময়লা। গতকাল বৃহস্পতিবার দেখা যায়, হাসপাতাল ভবনের পাশাপাশি নার্স ও চিকিৎসকের থাকার ডরমিটরি। এই তিন ভবনের মাঝে ফাঁকা মাঠ। মাঠে খেলছে স্থানীয় শিশু-কিশোরেরা। ভবনের পেছনে গাঁজা সেবন করছে চারজন তরুণ। হাসপাতাল ভবনের দেয়ালে ঝুলছে রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের ব্যক্তিগত ব্যানার। গেটের পাশে টিকিট কাউন্টার। বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসা রোগীদের টিকিট দিচ্ছেন দুজন কর্মী। খাতায় লিখে রাখা রোগীদের তালিকায় দেখা গেল, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সেবা নিতে এসেছে ১৫১ জন রোগী। এর মধ্যে ৩৮টি শিশু।

টিকিট কাউন্টারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কর্মদিবসে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত বহির্বিভাগ চালু থাকে। প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ রোগী আসে সেবা নিতে। নিয়োগ পাওয়ার আশায় বিনা বেতনেও বছরখানেক এখানে কাজ করছেন তাঁরা।

হাসপাতালের নিচতলায় আছে জরুরি বিভাগ, চিকিৎসা কর্মকর্তা (এমসিএইচ), চিকিৎসা কর্মকর্তা (ডেন্টাল), চিকিৎসা কর্মকর্তা (মেডিসিন), ইপিআই, ফার্মেসি ও আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার কক্ষ। সব কটি কক্ষেই টেবিল-চেয়ারে ময়লা জমে আছে। এর মাঝেই রোগীদের সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

আশ্রাফাবাদ থেকে সেবা নিতে আসা জামাল হোসেন বলেন, ‘খালি শুনি, হাসপাতাল চালু হইবো। কিন্তু চালু তো হয় না। বড় কোনো অসুখ হইলেই এদিক–সেদিক ছোটাছুটি করা লাগে।’

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ফরহাদ উদ্দিন জানান, বহির্বিভাগে ৯টি পদ থাকলেও বর্তমানে আছেন ৮ জন ডাক্তার। এর মধ্যে ডেন্টাল সার্জন ঢাকা মেডিকেলে প্রেষণে কাজ করেন। ফাঁকা তত্ত্বাবধায়কের পদও। আর ৩৬ জন কর্মচারীর পদ থাকলেও নিয়োগ পেয়েছেন মাত্র ২ জন। তিনি আরও জানান, হাসপাতাল ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর থেকেই এখানে বহির্বিভাগ চালু রয়েছে। কিন্তু পদ সৃষ্টি করা হয়েছে ২০১৭ সাল থেকে।

হাসপাতালের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় অন্তর্বিভাগের কার্যক্রম চলার কথা। তবে নির্মাণের ৫ বছর পরেও হাসপাতাল চালু না হওয়ায় বন্ধ রয়েছে কক্ষগুলো। দ্বিতীয় তলায় আছে অপারেশন থিয়েটার, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কক্ষ, মহিলা ওয়ার্ড, ইপিআই, নার্স কাউন্টার। সব কক্ষের সামনে জমে আছে প্রায় আধা ইঞ্চি পুরো ধুলার স্তর। কক্ষের ভেতরের দেয়াল ও বিছানায় মাকড়সা বাসা বেঁধেছে। স্টিলের টেবিলে জং ধরেছে। কোনো কোনো কক্ষের জানালার কাচ ভাঙা। এতে বাইরে থেকে আসা বৃষ্টির পানি আর ভেতরের ধুলা মিশে মেঝেতে জমেছে কাদার স্তর। তৃতীয় তলায় ২টি কেবিন এবং একটি করে পুরুষ, মহিলা ও শিশু ওয়ার্ড। এসব কক্ষের মেঝেতেও জমে আছে ধুলার স্তর।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক তৃপ্তি সরকার বলেন, ইনডোর সেবা চালু না হওয়ার কারণে কর্মচারীও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তাই এই কক্ষগুলোর দেখাশোনা করারও কেউ নেই। জনবল ও পর্যাপ্ত ওষুধের জন্য সিভিল সার্জনের কাছে আবেদন করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। বহির্বিভাগের অফিস পরিষ্কারেরও লোকজন নেই।