পরামর্শ দিতে যত সমস্যা!

আজিমপুর নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নিচ্ছে একটি শিশু। গতকালের ছবি l প্রথম আলো
আজিমপুর নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নিচ্ছে একটি শিশু। গতকালের ছবি l প্রথম আলো

রোগী ও তাঁদের স্বজনদের অপেক্ষার কক্ষে প্রতিবন্ধী মেয়ে জলিকে নিয়ে অপেক্ষা করছেন মা। ভেতরে প্যারামেডিক ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে আসা তিন বছরের আবু হুরাইরার চিকিৎসা দিচ্ছেন। তিনি শিশুটির ওজন, উচ্চতা মেপে ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন।

গতকাল রোববার রাজধানীর আজিমপুর এলাকার নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র-২-এ গিয়ে দেখা যায় এ দৃশ্য।

নারী, শিশুসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বল্প খরচে সেবা দিতে আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস প্রজেক্টের ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো চালু হয়। আর কেন্দ্রগুলো পরিচালনা করছে পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার।

অপেক্ষায় থাকা ৩০ বছরের জলিকেও প্যারামেডিক চিকিৎসা দেন। জলি অনেক দিন ধরে মেরুদণ্ডে ব্যথায় ভুগছেন। প্যারামেডিক ফরিদা খাতুন বলেন, এখন নারীরা গর্ভকালীন নানা ধরনের জটিলতা, সন্তান না হওয়ার সমস্যা নিয়ে বেশি আসেন। তবে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে।

এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে রোগীদের পরামর্শসেবাও দেওয়া হয়। পরামর্শ দেওয়ার কাজটি করেন কাউন্সেলর হাবিবা সুলতানা। তিনি জানালেন, অনেক রোগী পরামর্শ সহজে নিতে চান না। উদাহরণ দিতে গিয়ে সাম্প্রতিক একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

হাবিবা সুলতানা জানান, অন্তঃসত্ত্বা এক নারী আল্ট্রাসনোগ্রামের পর জানতে পারেন তাঁর অনাগত সন্তানটি মেয়ে। তাঁর আগের সন্তান দুটিও মেয়ে। পরে ওই নারীর পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় গর্ভপাতের। কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে ওই নারী আসেন তাঁদের কাছে। তখন গর্ভপাত না করাতে তিনি ওই নারী ও তাঁর স্বামীকে পরামর্শ দেন। কিন্তু প্রথমে তাঁরা পরামর্শ গ্রহণ করতে রাজি হচ্ছিলেন না।

হাবিবা সুলতানা বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত ওই নারী গর্ভপাত করাননি। সমাজের অনেকে এখনো কন্যাসন্তানকে বোঝা মনে করেন। এ বিষয়টি নিয়ে পরিবারকে বোঝাতে এখনো অনেক বেগ পেতে হয়।’

দাপ্তরিক কাজের জন্য গতকাল দুপুরের পর থেকে চিকিৎসক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছিলেন না। চিকিৎসক না থাকলে সাধারণ সমস্যা নিয়ে আসা রোগীদের চিকিৎসার কাজটি প্যারামেডিকই সারেন। তবে রোগীর জটিলতা বেশি এবং দ্রুত সেবার প্রয়োজন হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। আর সে রকম না হলে পরের দিন আসতে পরামর্শ দেন তাঁরা।

এতে রোগীদের ভোগান্তি হয় কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে প্যারামেডিক ফরিদা খাতুন বলেন, ‘তা তো একটু হয়ই। তবে চিকিৎসক দুজন থাকলে ভালো হয়।’

গতকাল এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৪৮ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ২৩ জন নারী, শিশু ১৪টি, কিশোরী ৪ জন। বাকিরা পুরুষ। সব কটি শিশুই ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে এসেছে।

এই কেন্দ্রে আজিমপুর, কামরাঙ্গীরচর, নবাবগঞ্জ লেন, নিউ পল্টন, রসুলবাগ, আবদুল আজিজ লেনসহ ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা পাঁচটি বস্তির লোকজনও চিকিৎসা নিতে আসেন। এই কেন্দ্রে প্রায় ১ হাজার ৪০০ দরিদ্র রোগীকে লাল কার্ডের আওতায় বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এখান থেকে ওষুধ কিনলেও মেলবে ৩০ শতাংশ ছাড়। ভিজিটও নামমাত্র মূল্য, ৪০ টাকা।

পরামর্শ বাক্স খুলে দেখা যায়, সেবায় সন্তুষ্ট রোগীরা। তবে পরিবেশ ও কিছু বিষয় নিয়ে অভিযোগ আছে। নিচতলায় অপেক্ষার কক্ষে এবং ব্রেস্ট ফিডিং কর্নারে ফ্যান না থাকা অন্যতম।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পার্টনারশিপ এলাকা-৩-এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক পূরবী আহমেদ বলেন, চিকিৎসক মাত্র একজন হওয়ায় চিকিৎসক ও প্যারামেডিকদের ওপর বেশি চাপ পড়ে। তিনি জানান, প্রকল্পে চিকিৎসক বাড়ানোর বিষয়টি নেই।