টাঙ্গাইল ছাত্রদল বাবাদের দখলে

টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রদলের ২৩৯ সদস্যবিশিষ্ট জেলা কমিটির কেউ নিয়মিত ছাত্র নন। কমিটির ২০২ জন নেতা বিবাহিত, অনেকের সন্তানও আছে। সাধারণ কর্মীরা বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়ায় অছাত্র ও বিবাহিত নেতাদের দখলে চলে গেছে সংগঠনটি।

জেলা ছাত্রদল সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে এক কর্মিসভায় খন্দকার রাশেদুল আলমকে সভাপতি ও শফিকুর রহমান খানকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়। তখন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ মাত্র ১৬টি পদে নাম ঘোষণা করা হয়। পরে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের তৎকালীন সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম কমিটির অনুমোদন দেন।

এরপর থেকে ওই কমিটির কোনো সভা হয়নি। কমিটি গঠনের সময় কিছু নেতা বিবাহিত ছিলেন। কিন্তু এখন প্রায় সবাই বিবাহিত। অনেকের সন্তানও আছে। নেতাদের কেউ ব্যবসায়ী, কেউ চাকরি করছেন। কয়েকজন মূল দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বর্তমান কমিটিতে হাতে গোনা কিছু অবিবাহিত সদস্য আছেন।

ছাত্রদলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কমিটির ২০ জন সহসভাপতির সবাই বাবা। এঁদের মধ্যে একজন বছর দুয়েক আগে চলে গেছেন আওয়ামী লীগে। ১৫ যুগ্ম সম্পাদকের ১২ জনই বিবাহিত। দুজন অবিবাহিত, একজন মারা গেছেন। ২২ সহসাধারণ সম্পাদকের ১৯ জন বিবাহিত। তাঁদের দুজন যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগে। সাংগঠনিক সম্পাদকও বিবাহিত।

ছয় সহসাংগঠনিক সম্পাদকের চারজন বিয়ে করেছেন। সম্পাদকমণ্ডলীর ৫৬ সদস্যের মধ্যে মাত্র ১০ জন অবিবাহিত। আর ১১৭ জন কার্যকরী পরিষদ সদস্যের মধ্যে প্রায় ১০০ বিয়ে করেছেন।

ছাত্রদলের স্থানীয় কর্মীরা বলেন, গত মে মাসে গঠিত টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির নতুন কমিটিতে ছাত্রদল সভাপতি খন্দকার রাশেদুল আলমকে যুগ্ম সম্পাদক এবং সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমানকে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সম্প্রতি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাত্রদলের পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সহসভাপতি মনিরুজ্জামানকে। আর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়েছেন যুগ্ম সম্পাদক নূরুল ইসলাম। তিনি অবিবাহিত, তবে মনিরুজ্জামান বিয়ে করেছেন।

জেলা ছাত্রদলের অব্যাহতি নেওয়া সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান খান বলেন, ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রে বিবাহিতদের ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। ২০০৯ সালে তিনি যখন দায়িত্ব নেন তখনো তিনি বিবাহিত ছিলেন।

টাঙ্গাইলের বিভিন্ন কলেজে অধ্যয়নরত ১০ জন ছাত্রদল কর্মী বলেন, নিয়মিত ছাত্রদের ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতৃত্বে আনা উচিত। দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় বর্তমান অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এখন বেশির ভাগ নেতা সংসারে মনোযোগী। তাঁরা সংগঠনকে তেমন সময় দেন না। আবার এই দীর্ঘ সময়ে অনেক নতুন কর্মী সংগঠনে এসেছেন। কিন্তু সম্মেলন না হওয়ায় তাঁরা পদ-পদবি নিয়ে রাজনীতি করতে পারছেন না।

জেলা ছাত্রদলের পদে আছেন এমন পাঁচ নেতা বলেন, তাঁরা চাচ্ছেন দ্রুত সম্মেলন হোক। তাঁদের অনেকের বয়স ৪৩ থেকে ৪৫। এ বয়সে ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচয় দিতে তাঁদের অস্বস্তি লাগে। যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সম্মেলন না হওয়ায় সাংগঠনিকভাবে ছাত্রদল দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। ত্যাগী ও সক্রিয়দের নিয়ে কমিটি করা প্রয়োজন।

জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনিরুজ্জামান বলেন, ছাত্রদলের সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে সময় এখনো ঠিক হয়নি।

এ ব্যাপারে কথা বলতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি।