আওয়ামী লীগে চার প্রার্থী, বিএনপিতে তিনজন

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নতুন ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ থেকে চারজন প্রার্থী সমর্থন চাইছেন। একই পদের জন্য বিএনপি থেকে সমর্থন প্রত্যাশা করছেন তিনজন প্রার্থী।

উভয় দলের স্থানীয় নেতারা বলছেন, নির্বাচনের বিষয়ে দল থেকে এখনো চূড়ান্তভাবে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন করা হয়নি। প্রার্থীরা দলের উচ্চপর্যায়ে দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন। এঁদের কেউ কেউ দল থেকে সবুজসংকেত পেয়েছেন বলে দাবি করে ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ও করছেন।

তুরাগ থানা আওয়ামী লীগের সূত্রে জানা গেছে, ডিএনসিসির নতুন ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ তুরাগ থানা আওয়ামী লীগের কাছে বাছাইকৃত তিনজন প্রার্থীর নামের তালিকা চেয়েছেন। ওই তালিকা থেকেই পরবর্তী সময়ে চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।

বিএনপির স্থানীয় নেতারা জানান, আজ (গতকাল) নয়াপল্টনে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির কার্যালয়ে মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা নতুন সব ওয়ার্ডে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন। আলোচনায় সবার মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। এই মতামতের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত প্রার্থী বাছাই করা হবে।

তাৎক্ষণিক কোনো প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করে ঘোষণা না করা হলেও এই সভায়ই প্রায় সব ওয়ার্ডের প্রার্থী বাছাই হয়ে গেছে বলে অনেকে মন্তব্য করেন। গতকাল সারা দিন পর্যায়ক্রমে নতুন ওয়ার্ডের দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে এই মতবিনিময় সভা করা হয়।

গত জুলাইয়ে হরিরামপুর ইউনিয়নের কাঠামো ভেঙে নতুন ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড গঠন করা হয়। এই ওয়ার্ডের এলাকাগুলো ফুলবাড়ি, রানাভোলা, ধরঙ্গারটেক, নয়ানগর, দিয়াবাড়ি, নলভোগ। পুরোনো ভোটার তালিকা অনুসারে এখানে প্রায় ২৮ হাজার ভোটার রয়েছেন।

আওয়ামী লীগ

এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন চাইছেন তুরাগ থানা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. নাসির উদ্দিন, সহসভাপতি লেহাজ উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন ও হরিরামপুর ইউপি আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. কফিল উদ্দিন।

হরিরামপুর ইউপি আওয়ামী লীগ ও তুরাগ থানা আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, এই চারজন প্রার্থী থেকে দলের মঙ্গলের জন্য একক প্রার্থী মনোনয়ন করতে হবে। তবে এ ব্যাপারে প্রার্থীদের নিয়ে একত্রে বসে এখনো কোনো সভা হয়নি। অন্যদিকে প্রার্থীদের ভাষ্য, দলীয় যেকোনো সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নেবেন তাঁরা এবং দলের সমর্থিত প্রার্থীর জন্য কাজ করবেন।

এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থনপ্রত্যাশী আরও দুজন প্রার্থী ছিলেন। এঁরা হলেন তুরাগ থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক এবং তুরাগ থানা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক মহিবুল হাসান। তাঁরা মো. নাসির উদ্দিনকে সমর্থন জানিয়ে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেন।

আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা বলেন, নির্বাচনে ইতিবাচক ফলাফল করতে হলে একক প্রার্থীর বিকল্প নেই। দল থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে এলে ফলাফল ভালো হবে না।

আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সবাই একই দলের রাজনীতি করি। আমাদের লক্ষ্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করা। এর জন্য বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে দেশে যে উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে, এ ধারাবাহিকতা আমরা বজায় রাখতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘দল থেকে কাউন্সিলর নির্বাচনের জন্য আমাকে সমর্থন দেওয়া হলে দলের সবাইকে নিয়ে কাজ করব। আমাদের প্রধান কাজ হবে এলাকার রাস্তা মেরামত ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ করা।’ অনেক টাকা খরচ করে রাস্তা নির্মাণ করা হলেও পানি জমে থাকায় রাস্তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় বলে তিনি জানান।

বিএনপি

এই ওয়ার্ডে বিএনপির সমর্থনপ্রত্যাশী প্রার্থী আছেন তিনজন। তাঁরা হলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সহসম্পাদক মো. মোস্তফা এবং তুরাগ থানা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল বাতেন।

বিএনপি থেকে এই তিনজনের কাউকে এখনো চূড়ান্তভাবে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। স্থানীয় সমর্থকদের প্রত্যাশা, দল থেকে আতিকুর রহমানকেই সমর্থন করা হবে। আতিকুর রহমানও দল থেকে সবুজসংকেত পেয়েছেন বলে প্রতিবেদককে জানান।

অন্যদিকে তুরাগ থানা বিএনপির নেতারা জানান, দলের সমর্থনপ্রত্যাশী আরেক প্রার্থী মো. মোস্তফার সঙ্গে দলীয় নেতা-কর্মীর সম্পর্ক ভালো ছিল। কিন্তু মাঝে বিভিন্ন কারণে তিনি দলীয় কার্যক্রম থেকে দূরে সরে যান। অনেক দিন দেশের বাইরেও ছিলেন বলে তাঁরা জানান।

আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমাকে গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হয়েছে। সবাইকে নিয়ে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই আমি নেতা-কর্মীদের বাসায় গিয়ে, সবাই একত্রে বসে, কখনো মুঠোফোনে খুদেবার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যমে ভোটারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছি।’ তিনি আরও বলেন, জনগণ সামাজিক নিরাপত্তাটা বেশি আশা করেন। জনগণের চাওয়া, জনপ্রতিনিধি এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করুক, ড্রেন করুক তাতেই এলাকা উন্নত হবে। সবার উন্নতি হবে।

বিএনপির সমর্থকেরা জানান, গত কয়েক বছরে এ এলাকায় কোনো উন্নয়ন হয়নি। এর প্রমাণ এলাকার রাস্তাঘাট।