ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনী পাস, জাপার ওয়াক আউট

জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের ওয়াক আউটের মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনী পাস হয়েছে। আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ‘ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) বিল, ২০১৭’ পাস হয়।

ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনীর ফলে বেসরকারি ব্যাংকে একই পরিবার থেকে এখন চারজন পরিচালক হতে পারবেন। আর তাঁদের মেয়াদ হবে টানা নয় বছর। এত দিন কোনো বেসরকারি ব্যাংকে এক পরিবার থেকে সর্বোচ্চ দুজন পরিচালক হতে পারতেন। আর তিন বছর করে দুই মেয়াদে ছয় বছর পরিচালক থাকার পর তিন বছর বিরতি দিয়ে আবারও পরিচালক হওয়ার সুযোগ ছিল।

পাসের জন্য বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এরপর হঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সংসদ। বিরোধী দলের কয়েকজন সদস্য ও একজন স্বতন্ত্র সাংসদ এই বিলটির ওপর সংশোধনী, জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেন।

বিলটির ওপর জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়ে স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, বিলটি তাঁদের বিস্মিত করেছে। ব্যক্তিস্বার্থে পাঁচবার এই আইন সংশোধন হয়েছে। জনস্বার্থের জন্য নয়। টানা নয় বছর পরিচালক থাকার পর তিন বছর বিরতি দিয়ে আবার পরিচালক হওয়া যাবে। এটি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেওয়ার কৌশল। কয়েকজন লুটেরার জন্য আইন সংশোধন করা ঠিক হবে না।

জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বিলটি প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়ে বলেন, ব্যাংককে কেউ নিজের বলে দাবি করতে পারেন না। স্পনসর ডিরেক্টরদের স্বার্থে যদি আইন করা হয়, তাহলে বাকি ৯০ ভাগকে বঞ্চিত করা হয়। বিলটি প্রত্যাহার করা হলে জাতি উপকৃত হবে।

বিরোধীদলীয় হুইপ নুরুল ইসলাম ওমর বলেন, একই ব্যক্তি এক পদে দীর্ঘদিন থাকলে আধিপত্য দেখা যায়। দিন দিন আমানতকারীদের সুবিধা কমানো হচ্ছে। আমানতকারীদের সুদের হার কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

বিরোধী দলের সদস্য নুরুল ইসলাম মিলন বলেন, ব্যাংক খাতকে সমূলে ধ্বংস করতে বিলটি আনা হয়েছে। বিলটি প্রত্যাহার করে নেওয়াই উচিত। ব্যাংকিং ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখোমুখি। মানুষ এখন ব্যাংকে টাকা রাখতে ভয় পায়। ২০১৭ সাল ব্যাংক খাতের দুর্যোগময় অবস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হয় না।

রওশন আরা মান্নান বলেন, ব্যাংক মালিকদের চাপে এই আইন সংশোধন করা হচ্ছে। দেশবাসী ব্যাংকিং খাত নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে আছে।

পরে অর্থমন্ত্রী মুহিত বিলটির যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, দেড় থেকে দুই বছর বিলটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কয়েক বছর ধরে আইনটি পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে সংশোধনের জন্য আনা হয়েছে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। তিনি বিরোধী দলের সদস্যদের প্রস্তাবগুলো প্রত্যাহার করে নেওয়ার অনুরোধ করেন।

এরপর হঠাৎ উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী দাঁড়িয়ে ফ্লোর চাইলে অধিবেশনে সভাপতিত্বকারী ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, ‘বিল নিয়ে আলোচনার মধ্যভাগে এভাবে দাঁড়ানো কোনো রুল পারমিট করে না। আমি দিতে পারছি না বলে দুঃখিত।’ প্রতিবাদে বিরোধী দলের সদস্যরা হইচই শুরু করেন। এ সময় ডেপুটি স্পিকার বারবার বলতে থাকেন, ‘কথাটা আগে শোনেন। দয়া করে কথা শোনেন।’ তিনি বলেন, সংশোধনী গৃহীতও হতে পারে।

কিন্তু বিরোধী দল তা না শুনে বিল পাসের আগেই ওয়াক আউট করে। ওয়াক আউটের পরে অধিবেশনকক্ষের বাইরে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, অর্থমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলে দিয়েছেন বিলটি পরিবর্তন, পরিবর্ধন করার সুযোগ নেই। সংশোধনী গ্রহণ করা সম্ভব নয়, সংশোধনী প্রস্তাব প্রত্যাহার করেন। অর্থমন্ত্রী এটা বলতে পারেন না। সংশোধনী দেওয়ার আগেই অর্থমন্ত্রী তা নাকচ করে দিয়েছেন। এ কারণে তাঁরা ওয়াক আউট করেছেন।

রাত পৌনে আটটার দিকে বিরোধী দলের সদস্যরা ওয়াক আউট করেন। ব্যাংক কোম্পানি বিলের সংশোধনী পাস হওয়ার পর আবার তাঁরা অধিবেশনে যোগ দেন।