প্রতিদিন ৫০০ মানুষ আগুনে পুড়ছে

দেশে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ মানুষ আগুনে পুড়ছে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হচ্ছে। গুরুতর দগ্ধ লোকজনের একটি অংশ মারা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া আগুনের দুর্ঘটনা কমানো যাবে না। সরকার, গণমাধ্যম, চিকিৎসক সমাজ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের চিকিৎসকেরা পোড়া রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এই ইউনিটে শয্যা আছে ৩৩০টি। প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকছে পাঁচ শতাধিক। গতকাল বুধবার ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে দেখা যায়, নিচতলায় বহির্বিভাগে রোগীর ভিড়। অন্য প্রতিটি তলার ওয়ার্ডের মেঝেতে রোগী। ওয়ার্ডের মেঝেতে জায়গা না হওয়ায় বহু রোগীর চিকিৎসা চলছে বারান্দায়।

অধ্যাপক সামন্তলাল সেন দুই দশকের বেশি আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা করছেন। ঢাকা মেডিকেলে এই ইউনিট প্রতিষ্ঠায় তাঁর একক ভূমিকা অনেক বেশি। এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালগুলোতে শয্যা বাড়িয়ে আগুনে পোড়া রোগী সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। দরকার মানুষকে সচেতন করা। মানুষের অভ্যাস বদলানোর ও আগুন থেকে দূরে থাকার কথা বলতে হবে। এ ব্যাপারে সরকার, গণমাধ্যম, চিকিৎসক সমাজ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।

বার্ন ইউনিটের পঞ্চম তলার বারান্দায় বাড়তি শয্যায় চিকিৎসা চলছে বরিশালের রিনা বেগমের। আত্মীয়রা জানান, ৮ জানুয়ারিআগুন পোহাতে গিয়ে রিনার শাড়িতে আগুন লাগে। দগ্ধ হন রিনা। কর্তব্যরত চিকিৎসক মোহাম্মদ হেদায়েত আলী খান বলেন, বর্তমানে ওই ওয়ার্ডের ৫০ শতাংশের বেশি রোগী শীত নিবারণে আগুন পোহাতে গিয়ে ও গরম পানিতে পুড়েছে।

শীত পোহাতে গিয়ে বেশি পুড়ছেন নারী ও বয়স্ক ব্যক্তিরা। শাড়িতে আগুন লাগার মুহূর্তে টের পাওয়া যায় না। যখন পাওয়া যায়, ততক্ষণে শরীরের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে চাদর বা কম্বলে আগুন লাগে। অন্যদিকে গরম পানিতে শিশুরা পুড়ছে বেশি।

বার্ন ইউনিটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেলে পোড়া রোগী ভর্তি ছিল ৫০২ জন। এই দিন মারা যায় ৭ জন। রংপুর মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে গতকাল ৫২ জন রোগী ভর্তি ছিল। গত ১১ দিনে ওই হাসপাতালে ১৪ জন পোড়া রোগী মারা গেছে। মৃত ও চিকিৎসাধীন প্রতিটি রোগীর শরীরে আগুন লাগে শীত নিবারণে আগুন পোহাতে গিয়ে। সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর ও খুলনা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের পরিস্থিতিও মোটামুটি একই। বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতালেও পোড়া রোগীর চিকিৎসা হয়। সব মিলে সারা দেশে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ মানুষ আগুনে পুড়ছে। শীতের কারণে এটা বেড়েছে।

প্রতিদিন এত মানুষ পুড়ছে কিন্তু প্রতিরোধে কোনো জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড নেই। চিকিৎসকেরা বলছেন, আগুনের ঝুঁকির বিষয়ে সচেতন করতে সরকারের গণমাধ্যমে প্রচার জোরদার করতে হবে।