হ্যাচারির পানি দিয়ে 'ডিস্টিল ওয়াটার'

১. হ্যাচারিতে পরিষ্কার করা হচ্ছে পুরোনো জার। ২. পাইপ দিয়ে হ্যাচারির পানি ভরা হচ্ছে জারে। ৩. পানি ভরার পর লেবেল লাগানো জার। ৪. বাজারে নেওয়ার জন্য পানিভর্তি জারগুলো ইজিবাইকে তোলা হচ্ছে। ছবিগুলো ঈশ্বরগঞ্জে মাইজবাগ ইউনিয়নের বৈরাটি মধ্যপাড়া গ্রামের l প্রথম আলো
১. হ্যাচারিতে পরিষ্কার করা হচ্ছে পুরোনো জার। ২. পাইপ দিয়ে হ্যাচারির পানি ভরা হচ্ছে জারে। ৩. পানি ভরার পর লেবেল লাগানো জার। ৪. বাজারে নেওয়ার জন্য পানিভর্তি জারগুলো ইজিবাইকে তোলা হচ্ছে। ছবিগুলো ঈশ্বরগঞ্জে মাইজবাগ ইউনিয়নের বৈরাটি মধ্যপাড়া গ্রামের l প্রথম আলো

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে একটি মৎস্য প্রজননকেন্দ্রের (হ্যাচারি) পানি ‘ডিস্টিল ওয়াটার’ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় একটি চক্র ওই পানি প্লাস্টিকের জারে ভরে ‘ভলভো’ ব্র্যান্ডের সিল লাগিয়ে বাজারজাত করছে। এসব জারের পানি বিভিন্ন যানবাহনের ব্যাটারিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। খনিজ পদার্থযুক্ত এই পানির কারণে দামি গাড়ির ব্যাটারি দ্রুত নষ্ট হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের পাশে উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের বৈরাটি মধ্যপাড়া গ্রামে ওই হ্যাচারিটি অবস্থিত। স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, এ হ্যাচারির আসল মালিক স্থানীয় বাবুল মিয়া। তিনি হ্যাচারিটি ভাড়া দিয়েছেন। ভাড়াটে হচ্ছেন একই গ্রামের মো. জিয়াউল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় ছয় ব্যক্তি বলেন, সব অবকাঠামো থাকার পরও হ্যাচারিতে মৎস্য প্রজননের (হ্যাচিং) কোনো কাজ হয় না। তবে জিয়াউল হ্যাচারির পানি জারে ভরে ভলভো কোম্পানির সিল মেরে বাজারজাত করছেন।

স্থানীয় মাইজবাগ বাজারের দুজন ব্যবসায়ী বলেন, জিয়াউল একসময় বাজারে মাংস বিক্রি করতেন। এখন তিনি কীভাবে যে ব্যাটারির পানির উৎপাদক হলেন তা তাঁদের বোধগম্য না। এখন জিয়াউলের আর্থিক অবস্থা ভালো।

হ্যাচারিতে গত সোমবার দুপুর ১২টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচ লিটার করে পানি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন সাদা রঙের জার সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এক তরুণকে দেখা গেল নলকূপের পানি সরবরাহের নল দিয়ে জারগুলোতে পানি ভরছেন। আরেকজন জারের গায়ে ভলভো ব্র্যান্ডের সিল লাগাচ্ছেন। সিলে ‘ভলভো ডি মিনারেলাইজড ওয়াটার’ এলএজি জেড লিমিটেড, কোনাবাড়ি, গাজীপুর লেখা রয়েছে। সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে দুজনই হ্যাচারি থেকে দ্রুত চলে যান। যাওয়ার আগে মামুন দাবি করেন, তিনি এখানে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করেন।

এরপর মহাসড়কে গিয়ে দেখা যায়, পানিভর্তি জারগুলো বাজারজাত করার জন্য ইজিবাইক ও মিনি ট্রাকে তোলা হচ্ছে। ইজিবাইকচালক নিজের নাম প্রকাশ না করে বলেন, তাঁকে পানির জারগুলো ঈশ্বরগঞ্জে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ভাড়া করা হয়েছে। তিনি সপ্তাহে তিন-চার দিন এখানে এসে পানি নিয়ে যান। জিয়াউলের সঙ্গে তাঁর এ বিষয়ে চুক্তি আছে বলে জানান ইজিবাইকচালক।

নান্দাইল শহরের নতুন বাজারের মোজাম্মেল অটোহাউসের মালিক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ব্যাটারিতে সম্পূর্ণ খনিজমুক্ত পানি ব্যবহার করতে হয়। তা না হলে ব্যাটারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহনের ব্যাটারিতে এসব পানি ভরা হয়।

একই বাজারে ইজিবাইক মেরামত ও ব্যাটারি চার্জ করেন হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে প্রতিটি পুরোনো প্লাস্টিকের জার ১২ টাকা দামে কিনে নেয় লোকজন। কাগজের তৈরি সিল বানাতে খরচ হয় দুই টাকা। পরে এসব জারে পানি ভরে নতুন সিল মেরে বিভিন্ন দোকানে ৪০ টাকা মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে।’

এদিকে গত সোমবার রাতে কথা হয় জিয়াউলের সঙ্গে। তিনি দাবি করেন, নলকূপের পানি বিশেষ উপায়ে খনিজমুক্ত করে বিক্রি করেন তিনি। এভাবে পানি বিক্রি করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি রয়েছে তাঁর। তবে অনুমতিসংক্রান্ত কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেননি।