প্রক্টরকে অবরুদ্ধ করার ঘটনায় মামলা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে অবরুদ্ধ করে রাখা ও ফটক ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাত ৫০-৬০ জনকে আসামি করে শাহবাগ থানায় মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কামরুল আহসান খান বাদী হয়ে আজ এই মামলাটি করেন।

এদিকে এই ঘটনা ও রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান তদন্ত কমিটি গঠন করার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন।

শাহবাগ থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মঞ্জুর হোসেন মানিক বলেন, প্রক্টরের কার্যালয়ের কলাপসিবল গেট ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাত ৫০-৬০ জনকে আসামি করে শাহবাগ থানায় মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা এস এম কামরুল আহসান বাদী হয়ে আজ এই মামলাটি করেন। ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন লাখ টাকার সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে আজ দুপুরে ছাত্রলীগের আট নেতাকে বহিষ্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) থেকে শুরু হয়ে কলাভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, কার্জন হল হয়ে মোকাররম ভবনে গিয়ে শেষ হয়।

মিছিল শেষে সমাপনী বক্তব্যে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা প্রশাসনকে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিসহ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত কমিটি করার সময় বেঁধে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখনো আমাদের কাউকে ডাকেনি। যদি দাবি মানা না হয়, তবে আমরা আগামী মঙ্গলবার থেকে লাগাতার কর্মসূচিতে যাব।’

রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে করা তদন্ত কমিটিতে রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিনাত হুদাকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটিতে সিনেট সদস্য অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দারকে সদস্য ও সহকারী প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক আবু হোসেন মোহাম্মদ আহসানকে সদস্যসচিব করা হয়েছে।

শিক্ষার্থী প্রতিনিধির বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মতান্ত্রিক কাঠামোতে এ ধরনের কোনো প্রতিনিধি রাখার সুযোগ নেই।

এদিকে নিপীড়নের বিচার চাইতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে অবরুদ্ধ করে রাখা, অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা ও কলাভবনের কলাপসিবল গেট ভাঙার ঘটনা খতিয়ে দেখতে আরেকটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক মো. মাকসুদুর রহমানকে আহ্বায়ক, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ বিল্‌লাল হোসেনকে সদস্য ও সহকারী প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক এ কে লুৎফল কবিরকে সদস্যসচিব করা হয়েছে।

রাজধানীর বড় সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে বাদ দেওয়ার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। সোমবার বিকেলে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থানের সময় ছাত্রলীগের বিভিন্ন হল শাখার নেতা-কর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্রদের হুমকি এবং ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত ও গালাগাল করেন। তাঁরা আন্দোলনের সমন্বয়কারী মশিউর রহমানকে উপাচার্যের কার্যালয়ে মারধর করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁকে থানায় সোপর্দ করে। এসবের প্রতিবাদে গতকাল আবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টার দিকে অপরাজেয় বাংলায় মানববন্ধন শেষে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দের’ ব্যানারে বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মী ও ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের কার্যালয় ঘেরাও করেন। এ সময় প্রক্টরের কার্যালয়ের দুই পাশের কলাপসিবল গেট লাগিয়ে দেওয়া হয়। তিন শতাধিক ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ওই গেট ভেঙে প্রক্টরের কক্ষের সামনে অবস্থান নেন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানীকে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা তাঁর কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন। প্রক্টর সমাধান দিতে ‘অপারগতা’ প্রকাশ করলে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীরা তাঁকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধিসহ তদন্ত কমিটি করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে (রোববার) প্রতিবেদন প্রকাশ করার সময় বেঁধে দেন।