উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় খুন হয় রাজিন

ফাওমিদ তানভীর রাজিন
ফাওমিদ তানভীর রাজিন

খুলনা পাবলিক কলেজের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল ফাওমিদ তানভীর রাজিন (১২)। আর তার বান্ধবী পড়ত খুলনা পুলিশ লাইনস স্কুলে। দুজনের পরিবারেরও জানাশোনা ছিল। দুজনের স্কুল আলাদা হলেও একই শ্রেণিতে পড়ার কারণে কোচিং সেন্টারে একসঙ্গে যাতায়াত করত। কিন্তু এই যাওয়া-আসার পথে ওই মেয়েকে উত্ত্যক্ত করত অপর একটি স্কুলের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। এর প্রতিবাদ করায় পূর্বপরিকল্পিতভাবে রাজিনকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তার পরিবারের।

গতকাল শনিবার রাত নয়টার দিকে পাবলিক কলেজের মাঠে ওই কলেজের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে ওই কিশোরের নেতৃত্বে কয়েকজন রাজিনকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

খুলনা পাবলিক কলেজটি নগরের বয়রা এলাকায়। ওই কলেজে তৃতীয় শ্রেণি থেকে শুরু করে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। গতকাল ছিল দুই দিনব্যাপী চলা অনুষ্ঠানের শেষ দিন।

রাজিনদের বাড়ি খুলনা নগরের বড় বয়রা এলাকার পালপাড়ায়। তারা দুই ভাই। বড় ভাই পড়াশোনা করে নগরের একটি পলিটেকনিক কলেজে। বাবা শেখ জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন মোংলা বন্দরের স্টোরকিপার। বর্তমানে অবসরে রয়েছেন। আর মা রেহানা আক্তার পুলিশ লাইনস স্কুলের জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক। রাজিনের বান্ধবীর মা-ও তার মায়ের সঙ্গে একই স্কুলে শিক্ষকতা করেন।

এ হত্যার ঘটনায় আজ রোববার দুপুরে রাজিনের বাবা শেখ জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে নগরের খালিশপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় পাঁচ কিশোর ও অজ্ঞাতনামা আরও ৮ থেকে ১০ জনকে আসামি করা হয়।

ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচজনকে আটক করে। মামলা হওয়ার পর তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

রাজিনের মা রেহানা আক্তার বিলাপ করতে করতে বলেন, ওই মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় রাজিনকে খুন করা হয়েছে। রাজিন এবার ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য পরীক্ষা দিয়েছিল। পরীক্ষা খুবই ভালো হয়েছে। সে আশাবাদী ছিল ক্যাডেট কলেজে তার সুযোগ হবে। এ কারণে পাবলিক কলেজের স্কুল ড্রেসও সে বানায়নি।

হত্যাকাণ্ডের কিছুক্ষণ আগ পর্যন্ত একসঙ্গে অনুষ্ঠান দেখছিল রাজিন ও তার সহপাঠী শাদমান রাশিদ। পরে শাদমানের বাবা এসে তাকে সামনে নিয়ে যান। আর রাজিন আগের স্থানে বসেই অনুষ্ঠান দেখছিল। শাদমান রাশিদ প্রথম আলোকে জানায়, রাজিন ছিল খুবই শান্ত প্রকৃতির। খুবই মেধাবী। ছিল ক্লাস ক্যাপ্টেনও।

শাদমানের বাবা মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, রাজিনের ওই ঘটনায় শাদমান খুবই মুষড়ে পড়েছে। সে বারবার বলছে, রাজিনকে ওই সময় সামনে নিয়ে গেলে তাকে আর মরতে হতো না।

রাজিনের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, শুক্রবার প্রথম দিন পাবলিক কলেজে অনুষ্ঠান হয়েছে গেট বন্ধ করে। সেখানে বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু শনিবার রাত আটটার দিকে মূল গেট খুলে দেওয়া হয়। এ কারণে বহিরাগত লোকজন কলেজে ঢুকতে পেরেছে। তাঁরা রাজিনের মৃত্যুর জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন।

তবে ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি দাবি করেন, অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি ছিল না। ঘটনার খুব কাছাকাছিই পুলিশ ছিল। কিন্তু ভিড়ের মধ্যে কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল, তা কেউ বিশ্বাসই করতে পারছে না। রাজিন নিহত হওয়ার ঘটনায় কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা খুবই উদ্বিগ্ন ও মর্মাহত।

খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রাজিনকে হত্যার পরপরই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আটক করতে পুলিশ অভিযান শুরু করে। র‌্যাব ও পুলিশের আলাদা অভিযানে এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে।