২১ আগস্ট মামলায় তারেক জোর করে আসামি

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার এজাহার এবং একাধিক জিডির একটিতেও নাম নেই। প্রথম যে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়, তাতেও নাম ছিল না। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন ও আদালতের অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে করা অধিকতর তদন্তে একরকম জোর করে এই মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম ঢোকানো হয়েছে।

গ্রেনেড হামলা মামলার পলাতক আসামি, তারেক রহমানের পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী এ কে এম আখতার হোসেন সোমবার যুক্তিতর্কে এসব কথা বলেন। পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে স্থাপিত বিশেষ আদালতে গ্রেনেড হামলাসংক্রান্ত হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলা দুটির বিচারকাজ চলছে।

এ কে এম আখতার হোসেন বলেন, অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগ করে বলা হয়েছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারীদের সব ধরনের প্রশাসনিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন তারেক রহমান। কিন্তু বাস্তবতা হলো ওই হামলার সময় তারেক রহমান বিএনপি কিংবা চারদলীয় জোট সরকারের এমন দায়িত্বশীল পর্যায়ের কেউ ছিলেন না যে তিনি এ ধরনের আশ্বাস দিতে পারেন এবং দিলেও তাতে আস্থা রেখে কেউ এ ধরনের হামলা চালাতে পারেন। তা ছাড়া মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ কোনোভাবেই এ ঘটনার সঙ্গে তারেক রহমানের সম্পৃক্ততা প্রমাণ করতে পারেনি। তাই এটা পরিষ্কার যে এ মামলায় তাঁকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জড়ানো হয়েছে।

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে এই মামলার প্রধান আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান পরে সাংবাদিকদের বলেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাউকে এ মামলায় জড়ানো হয়নি। গ্রেনেড হামলার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তারেক রহমান যে জড়িত, রাষ্ট্রপক্ষ তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। তারেক রহমান তাঁর বনানীর হাওয়া ভবনে ষড়যন্ত্র বৈঠক করেছিলেন। অপরাধের সম্পৃক্ততার ভিত্তিতেই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা আসামি হয়েছেন।

আদালতের কার্যক্রমের শুরুতে কারাগারে আটক আসামি মাওলানা আবদুল হান্নান ওরফে সাব্বিরের পক্ষে আইনজীবী মাঈনুদ্দিন মিয়া আগের দিনের ধারাবাহিকতায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। তিনি মামলার এজাহার, অভিযোগপত্র ও সাক্ষীর জবানবন্দির মধ্যকার বিভিন্ন অসংগতি তুলে ধরে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ মাওলানা সাব্বিরের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণ করতে পারেনি। পুলিশ প্রকৃত আসামি সাব্বিরকে বাদ দিয়ে তাঁর মক্কেলকে এই মামলায় জড়িয়েছে। আর যে মামলার সূত্র ধরে তাঁকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে, সেই রমনা বটমূলে বোমা বিস্ফোরণ মামলার রায়ে মাওলানা সাব্বির খালাস পেয়েছেন। এই মামলায়ও সাব্বিরের বেকসুর খালাস চান তিনি।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, মাওলানা সাব্বির যে রমনা বটমূলে বোমা বিস্ফোরণের একটি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, আইনজীবী সাহেব তা বোধ হয় ভুলে গেছেন।

এরপর তারেক রহমানের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। বেলা পৌনে তিনটা পর্যন্ত তা চলে। এরপর আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত আদালতের কার্যক্রম মুলতবি করেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিন।

এ মামলায় সোমবার পর্যন্ত ১৬ জন আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। গতকাল যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের ৩৪তম কার্যদিবসে ১৭তম হিসেবে তারেক রহমানের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবারও তা চলবে।