অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছেই

রংপুর নগরের দমদমা এলাকার লক্ষণপাড়ায় ঘাঘট নদে তিনটি শ্যালোযন্ত্র বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। গতকালের ছবি l মঈনুল ইসলাম
রংপুর নগরের দমদমা এলাকার লক্ষণপাড়ায় ঘাঘট নদে তিনটি শ্যালোযন্ত্র বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। গতকালের ছবি l মঈনুল ইসলাম

রংপুর নগরের লক্ষ্মণপাড়া এলাকায় ঘাঘট নদে তিনটি অগভীর নলকূপ (শ্যালো মেশিন) বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন থামছেই না। ফলে স্থানীয় লোকজনের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বালু উত্তোলনের ফলে ইতিমধ্যে অনেকের আবাদি জমি ভেঙে নদে বিলীন হয়েছে।

এদিকে নদ থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করার প্রতিবাদের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বালু উত্তোলনকারী ও এলাকাবাসীর মধ্যে মারামারি ও মামলাও হয়েছে। এরপরও বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না।

২০১০ সালের বালুমহাল আইনে বলা আছে, বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান, চা-বাগানের ছড়া বা নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এ ছাড়া সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা বা আবাসিক এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ। কিন্তু তা না মেনে এলাকার প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ী আমিনুলসহ তাঁর লোকজন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমিনুল ও তাঁর লোকজন অবৈধভাবে তিন মাস ধরে নদ থেকে বালু উত্তোলন করছেন। বালু উত্তোলন বন্ধ করতে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বালু উত্তোলনকারীকে জানানো হলেও তিনি বিষয়টি আমলে নেননি। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১৭ নভেম্বর এলাকাবাসীর সঙ্গে বালু উত্তোলনকারী ও তাঁর চক্রের সংঘর্ষ হয়। এতে প্রতিবাদকারী কয়েকজন গ্রামবাসী আহত হন। এরপর লক্ষ্মণপাড়া গ্রামের বাসিন্দা উজ্জ্বল মিয়া বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন। এতে বালু উত্তোলনকারী আমিনুল ইসলাম, তাঁর সহযোগী আবুজার রহমান ও আতাউর রহমানকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া এলাকাবাসীর পক্ষে ওই এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম ২২ নভেম্বর অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, নগরের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মণপাড়া এলাকার মহাসড়কসংলগ্ন দমদমা সেতুর প্রায় ৫০০ গজ পশ্চিমে ঘাঘট নদে তিনটি অগভীর নলকূপ বসিয়ে পাইপ লাগিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ওই বালু নদের চরের মধ্যে ফেলা হচ্ছে। সেখান থেকে ট্রাকে করে এসব বালু নদের ওপর নির্মিত রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ওই নদে দুই স্থানে বাঁধ দিয়ে আড়াআড়িভাবে মাটি কেটে ট্রলি চলাচলের জন্য ওই রাস্তা করা হয়েছে। নদের মধ্যে নির্মিত সড়কটির প্রস্থ আনুমানিক ১৫ ফুট। তবে নদের পানিপ্রবাহের জন্য নির্মিত সড়কের মধ্যখানে সামান্য ফুটো রাখা হয়েছে। এক ট্রাক বালু ৫০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। প্রতিদিন এ স্থান থেকে ৩৫-৪০ ট্রলি বালু উত্তোলন করা হয়।

বালু উত্তোলনের ফলে লক্ষ্মণপাড়া গ্রামের অনেক কৃষকের আবাদি জমি ভেঙে নদে বিলীন হয়ে গেছে। এক বছরে কৃষক কামাল উদ্দিনের প্রায় ১০ শতাংশ জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখন ৫০ শতাংশ আবাদি জমি রয়েছে। এভাবে বালু উত্তোলন করা হলে একসময় আমাদের আবাদি জমি হয়তো আর থাকবে না।’

একই এলাকার কৃষক সিরাজুল ইসলামের ৩৫ শতাংশ আবাদি জমি ভাঙনে বিলীন হয়েছে। তিনি বলেন, এখন বাড়িভিটা হুমকির মধ্যে রয়েছে। এমন আরও অনেকেই তাঁদের আবাদি জমি নদে বিলীন হওয়ার কথা বলেছেন।

তবে বালু উত্তোলনকারী আমিনুল বলেন, ‘ভাঙনের ফলে নদের মধ্যে আমাদেরও অনেক জমি আছে। সেই জমি ভরাট হওয়ায় সেখান থেকে বালু উত্তোলন করছি।’

কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বালু উত্তোলনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে মারামারি হয়েছিল। মামলাও হয়েছে। বালু উত্তোলন বন্ধের বিষয়টি আমাদের দেখার বিষয় নয়।’

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আমাদের লোক গেলে বালু উত্তোলন বন্ধ থাকে। চলে আসার পর আবার হয়। এরপরও বিষয়টি দেখা হবে।’