সড়কের ধুলোয় ধূসর চলাচল

সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ জাতীয় সড়ক চার বছর ধরে ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে। ধুলায় সাদা সড়কে চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রী ও পথচারীদের। গত রোববার দুপুরে তেলিখাল এলাকায় l ছবি: আনিস মাহমুদ
সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ জাতীয় সড়ক চার বছর ধরে ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে। ধুলায় সাদা সড়কে চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রী ও পথচারীদের। গত রোববার দুপুরে তেলিখাল এলাকায় l ছবি: আনিস মাহমুদ

মোটরসাইকেলের আরোহী দুজনের কালো জ্যাকেট ধুলোয় সাদা হয়ে গেছে। চোখ-মুখ থেকে শুরু করে প্যান্ট, জুতো সবখানে ধুলোর আস্তরণ। গত সোমবার সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ মহাসড়ক ধরে চলতে গিয়ে তাঁদের এ দশা হয়েছে।

ওই দুই যুবক হলেন শাহীন মিয়া ও আফতাব উদ্দিন। বাড়ি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়। তাঁরা উপজেলা সদর থেকে জেলা শহরে আসছিলেন। তাঁরা বললেন, চার বছর ধরে সড়কটি ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে। গত বর্ষা মৌসুমে সড়কজুড়ে ছিল জল-কাদা। আর এখন ব্যাপক ধুলা। তাই সড়কটি দিয়ে চলাচলকারী কোম্পানীগঞ্জ, সিলেট সদর ও গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্তত ১০ লাখ মানুষকে নিয়মিত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

কোম্পানীগঞ্জের ১২ জন বাসিন্দা জানান, ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ সড়কের অন্তত ৭০ শতাংশই যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। আগে এ সড়ক পাড়ি দিতে পৌনে এক ঘণ্টা সময় লাগত, এখন সেটা দাঁড়িয়েছে তিন থেকে চার ঘণ্টায়। ভাঙাচোরা রাস্তায় থেমে থেমে যান চলাচল করছে। এ ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো গাড়ির চাকা বিকল হয়ে পড়ায় যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়ছেন।

সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের সালুটিকর, বর্ণি, তেলিখাল, লাছুখাল, তৈমুরনগর, পারুয়াবাজার, থানাবাজার ও ভোলাগঞ্জ অংশে অবস্থা বেশি নাজুক। এসব স্থানে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। সারাক্ষণ ধুলো উড়ছে। ভাঙাচোরা হওয়ায় যানবাহন চলছে এঁকেবেঁকে।

থানাবাজারের দুজন ব্যবসায়ী বলেন, সড়কে ধুলো ওড়ায় প্রায় সময় দোকানপাট বন্ধ রাখতে হয়। সড়কটির দুরবস্থার কারণে অনেকে খুব বেশি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া জেলা শহরে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এ কারণে উপজেলায় ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

যাত্রী ও চালকেরা বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারি ভোলাগঞ্জে যেতে হয় এ সড়ক দিয়ে। তাই অন্যান্য যানবাহনের পাশাপাশি প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে কয়েক হাজার ট্রাক চলাচল করে। এ অবস্থায় ভাঙাচোরা সড়কটি আরও বিধ্বস্ত হচ্ছে।

সিএনজি অটোরিকশার চালক মাঈনউদ্দিন বলেন, প্রায় দিনই তাঁর গাড়ির চাকা গর্তে পড়ে বিকল হয়ে যায়। এ অবস্থায় তিনি যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে থাকেন।

২০১৪ সালের মে মাসে সড়কটি পরিদর্শন করে এটিকে ‘ক্যানসার আক্রান্ত সড়ক’ বলে মন্তব্য করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সে সময় তিনি সড়কটি পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করার আশ্বাস দেন। সে অনুযায়ী ২০১৬ সালের মে থেকে ৪১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালের এপ্রিলে সড়কটি নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জের পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহ মো. জামাল উদ্দিন বলেন, সড়কটির পুনর্নির্মাণের কাজ ধীরগতিতে চলছে। এ অবস্থায় বেহাল সড়কের কারণে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে রোগীদের জেলা সদরে নিয়ে যেতে চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হয়। তাই যেকোনো মূল্যে সওজ কর্তৃপক্ষের দ্রুত কাজ শেষ করা উচিত।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত বলেন, সড়কটি পুনর্নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতেই চলছে। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত পুরোপুরিভাবে ভোগান্তি শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।