ভাগ্য ফিরছে চর জহিরুদ্দিনবাসীর

>
  • বেশির ভাগ বাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে।
  • আট গুচ্ছগ্রামে জায়গা হচ্ছে ৪২০ পরিবারের।
  • যোগাযোগব্যবস্থায় ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে।

স্বামী ও এক ছেলে নিয়ে সংসার রিজিয়া বেগমের (৫৫)। স্বামী আবদুল কাশেম নদীতে মাছ ধরে সংসার চালান। খাওয়া-পরার তেমন অভাব নেই রিজিয়াদের। তবে রাত এলেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডুবতে হচ্ছিল। ভরসা ছিল কেরোসিনের কুপি। তবে এখন আর কুপি জ্বালাতে হয় না তজুমদ্দিন উপজেলার চর জহিরুদ্দিনের সোনাপুর ইউনিয়নের এই বাসিন্দার। সরকার তাঁদের ঘরে বিনা মূল্যে সৌরবিদ্যুৎ দিয়েছে।

একই চরের বাসিন্দা আবু তাহের বলেন, আগে রাতের বেলা বাজারে গিয়ে টাকা দিয়ে মুঠোফোনে চার্জ দিতে হতো। এখন সৌরবিদ্যুৎ থাকায় ঘরে বসেই মুঠোফোনে চার্জ দিতে পারছেন তিনি।

চর মানেই নাগরিক সুবিধার অভাব প্রকট। তবে ভোলার ‌চর জহিরুদ্দিনবাসীর ভাগ্য কিছুটা সুপ্রসন্ন। দুর্গম এই চরাবাসীর অর্ধেকের বেশি পরিবারেই আছেসৌরবিদ্যুৎ। তাদের জন্য নির্মাণ হয়েছে ও হচ্ছে গুচ্ছগ্রাম। বসছে নিরাপদ পানির আরও১০০টি গভীর নলকূপ।

উপজেলার মলংচরা ও সোনাপুর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চর জহিরুদ্দিন মেঘনা নদীর মাঝখানে অবস্থিত। তজুমদ্দিনের চৌমহনী লঞ্চঘাট থেকে সেখানে ট্রলারে যেতে দেড় ঘণ্টার মতো সময় লাগে। চরের হানিফ ব্যাপারীর ঘাট থেকে নতুনবাজার পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার পাকা সড়ক হয়েছে। বাকি ২৫ কিলোমিটার সড়ক কাঁচা। সড়কের বিভিন্ন স্থানে গাছের ডাল ও বাঁশের তৈরি ১৯টি সাঁকো রয়েছে।

গত শুক্রবার সরেজমিন দেখা যায়, চরের অধিকাংশ পরিবারেই খড়ের (ধানের নাড়া) ঘর। ম্যানগ্রোভ বন থেকে ডাল দিয়ে ঘরের খুঁটি বানানো। অধিকাংশ বাড়িতে যাওয়ার মতো রাস্তা নেই। তবে বেশির ভাগ বাড়িতেই ঘরের চালের ওপর বসানো হয়েছে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল।

চর জহিরুদ্দিনের প্রবীণ বাসিন্দা ফারুক পালওয়ান। তিনি বলেন, এই চরে এখন প্রায় দুই হাজার পরিবারের স্থায়ী বসবাস। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিবারে সৌরবিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। অনেকে সরকারি সহায়তায় ঘরে সৌর-প্যানেল বসিয়েছেন। অন্যরা ঋণ নিয়ে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছেন।

আটটি গুচ্ছগ্রাম

শুক্রবার দুপুরে চরবাসীর উন্নয়নে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে চরবাসীর দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল সবার জন্য নিরাপদ আশ্রয়, পাকা সড়ক, সেতু-কালভার্ট ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা।

সমাবেশে উপস্থিত তজুমদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জালাল উদ্দিন বলেন, চর জহিরুদ্দিনে মোট আটটি গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ হচ্ছে। চারটি শিগগিরই ২১০টি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। বাকি চারটির নির্মাণকাজ চলছে। সেগুলো নির্মিত হলে আরও ২১০টি পরিবারের আশ্রয় হবে।

নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতেই চরে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভাঙনকবলিত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করা হয়ে থাকে।

যোগাযোগব্যবস্থা

যোগাযোগব্যবস্থার সংকট থেকেও ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে চর জহিরুদ্দিন। গত দুই বছরে এই চরে ছয়টি কালভার্ট নির্মাণ করেছে ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তর। আগামী এক বছরে আরও কিছু কালভার্ট নির্মাণ করার কথা বলছে তারা।

 ভোলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী আবদুস সালাম বলেন, চর জহিরুদ্দিনে একটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। আরও দুটির কাজ চলছে। একই সঙ্গে প্রায় চার কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। বাকি সড়ক ও সেতু নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তাব অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

এ ছাড়া চরে বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য ১০০টি গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী জুনে সেগুলো স্থাপনের কাজ শুরু হবে। এই তথ্য দিলেন ভোলা-৩ আসনের সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের মধ্যে চরের প্রতিটি ঘরে সৌরবিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে। বন্ধ থাকা দুটি কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতেও সব রকমের চেষ্টা চলছে। চরবাসীর জন্য কোনো প্রকল্প নিয়ে কেউ যাতে ধান্দাবাজি না করতে পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন তিনি।