সেতুর মুখে সীমানাপ্রাচীর

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামে খালে প্রায় ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর পশ্চিম পাশে অর্ধেক অংশে প্রাচীর নির্মাণ করায় পথচারী ও যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছে।  ছবি: প্রথম আলো
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামে খালে প্রায় ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর পশ্চিম পাশে অর্ধেক অংশে প্রাচীর নির্মাণ করায় পথচারী ও যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। ছবি: প্রথম আলো
  • উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দারা ভোগান্তিতে পড়েছেন
  • যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে

সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে চার মাস আগে। সেতুটির পশ্চিম পাশে সংযোগ সড়কের অর্ধেক অংশে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেছেন পার্শ্ববর্তী জমির মালিক। এতে সেতু দিয়ে পথচারী ও যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
সেতুটির অবস্থান রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সেতুর দুই পাশের দুটি পরিবারের মধ্যে বিরোধের কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন সেতুর মুখে প্রাচীর সরানোর নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় বিষ্ণুপুর গ্রামে ২৬ লাখ ৫৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩৪ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। নির্মাণকাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়ক নির্মাণে কিছুটা দেরি হয়। যখন খালের ওপর সেতু নির্মাণ হয়, তখন দুই পাশে কোনো সীমানাপ্রাচীর বা দেয়াল ছিল না। নির্মাণের পর সেতুর পশ্চিম পাশের সামনের অর্ধেক রাস্তাজুড়ে সীমানাপ্রাচীর হিসেবে দেয়াল তুলেছে একটি পরিবার। ওই পরিবার বলেছে, সেতু তৈরির সময় তারা কিছু জায়গা ছেড়ে দিয়েছে। আর জায়গা ছাড়তে রাজি নয়। ওই দেয়ালের কারণে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর পূর্ব পাশে কয়েকটি বাড়ি। পশ্চিম পাশে ফজর আলীর বাড়ি। তিনি সেতুর মুখে অর্ধেক অংশজুড়ে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেছেন। রাস্তার পাশে রাজবাড়ী সদর উপজেলার রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী সেতু দিয়ে নিয়মিত চলাচল করে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনামিকা ও রাহুল জানায়, আগে বাঁশের সরু সাঁকো দিয়ে চলতে হতো। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটত। এখন সেতু হলেও ভালোভাবে চলাচল করা যায় না।
গ্রামের বাসিন্দা মইন দেওয়ান বলেন, সেতুর নির্মাণকাজ হলেও রাস্তা ছিল না। তখন এলাকার লোকজন বাঁশের মাচা তৈরি করে দুই পাশ দিয়ে সেতুতে উঠত। পরে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বালু-মাটি ফেলে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেতুর সামনে দেয়াল থাকায় যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এই সেতু এলাকাবাসীর যদি কাজেই না আসে, তাহলে করে লাভ কি?
ফজর আলীর বড় ছেলে রমিজ মল্লিক বলেন, ‘খালের ওপর ছোট বক্স কালভার্ট ছিল। সেখানে অপরিকল্পিতভাবে সেতু করায় প্রায় দেড় শতাংশ জমি দিতে হয়েছে। এখন আগের জায়গায় থাকা টিনের বেড়া সরিয়ে ইটের দেয়াল করায় সমস্যা বেড়েছে। অন্য পাশে আরেক পরিবারের বাড়ির দেয়াল থাকলেও তা সরানো হচ্ছে না। তাঁরা যদি জায়গা ছেড়ে দেন আমরাও দেয়াল ভেঙে ফেলব।’
সেতুর পূর্ব পাশে কাজী বারেক শেখের বাড়ি। তাঁর চাচা কাজী বজলুল হক বলেন, ‘আমাদের বাড়ি অনেক পুরোনো। বাড়ির পেছন দিয়ে রাস্তার জন্য জায়গা ছাড়া হয়েছে। সেতু দিয়ে চলাচলের জন্য যদি আরও জায়গা ছাড়তে হয়, আমরা রাজি আছি।’
ছোটভাকলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বলেন, ওই দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেয়াল সরানোর নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। দুপক্ষের সঙ্গে বসে সমাধান করার চেষ্টা চলছে।