খালেদা জিয়ার মামলায় কোন ধারায় কী সাজা?

আদালত প্রাঙ্গণে খালেদা জিয়া। প্রথম আলাে ফাইল ছবি
আদালত প্রাঙ্গণে খালেদা জিয়া। প্রথম আলাে ফাইল ছবি

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে আজ বৃহস্পতিবার। এই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ছয়জন আসামি। রায়ে বিএনপি চেয়ারপারসনসহ অন্যদের সাজা হতে পারে, আবার তাঁরা খালাসও পেতে পারেন।

এই ছয় আসামির বিরুদ্ধে যেসব ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে, এতে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন, সর্বনিম্ন যেকোনো মেয়াদে কারাদণ্ড। এর সঙ্গে আর্থিক কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

বিদেশ থেকে পাঠানো এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্য বিদেশ থেকে পাঠানো ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা ক্ষমতার অপব্যহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করার অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই দুদক এই মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া, তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন দুদকের উপপরিচালক হারুন অর রশীদ। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আদালত খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯, ১০৯ ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ গঠন করেন।

দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি তার সরকারি কর্মচারীজনিত ক্ষমতার বা একজন ব্যাংকার, বণিক, আড়তদার, দালাল, অ্যাটর্নি হিসেবে তার ব্যবসায় যেকোনো প্রকারের কোনো সম্পত্তি বা কোনো সম্পত্তির ওপর আধিপত্যের ভারপ্রাপ্ত হয়ে সম্পত্তি সম্পর্কে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করেন, সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

আর দুর্নীতি দমন আইনের ৫(২)-এ বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারী অপরাধমূলক অসদাচরণ করিলে বা করার উদ্যোগ গ্রহণ করিলে তিনি সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের যোগ্য হবেন। অপরাধমূলক অসদাচরণ সংশ্লিষ্ট অর্থিক সম্পদ অথবা সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অন্য আসামিরা হলেন সাবেক সাংসদ ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও জিয়াউর রহমানের বোনের ছেলে মমিনুর রহমান। মামলায় শুরু থেকে পলাতক আছেন তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।

মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলে ইউনাইটেড সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে ১২ দশমিক ৫৫ লাখ মার্কিন ডলার আসে, যা বাংলাদেশি টাকায় তৎকালীন ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা। তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় ১৯৯১ সালের ৯ জুন থেকে ১৯৯৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই অর্থ দেশের প্রতিষ্ঠিত কোনো এতিমখানায় না দিয়ে অস্তিত্ববিহীন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট গঠন করেন। অথচ কোনো নীতিমালা তিনি তৈরি করেননি, করেননি কোনো জবাবদিহিতীর ব্যবস্থাও। অথচ খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল থেকে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা অস্তিত্ববিহিনী জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে পাঠান। পরে ওই টাকা আত্মসাত করেন, যার জন্য তিনি দায়ী। তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে বলেন, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় থেকে নিজের পদমর্যাদা বলে সরকারি এতিম তহবিলের আর্থিক দায়িত্ববান বা জিম্মাদার হয়ে বা তহবিল পরিচালনার ভারপ্রাপ্ত হয়ে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে দণ্ডবিধির ৪০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারার অপরাধ করেছেন।