খেলাধুলা ও পড়াশোনায় সেরা যমজ বোনের গল্প

যমজ রিক্তা-মুক্তা খেলাধুলার পাশাপাশি লেখাপড়ায়ও সেরা।  ছবি: প্রথম আলো
যমজ রিক্তা-মুক্তা খেলাধুলার পাশাপাশি লেখাপড়ায়ও সেরা। ছবি: প্রথম আলো

একজন পেয়েছেন চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক, আরেকজন ডিনস অ্যাওয়ার্ড। কেবল পড়াশোনাতেই তাঁরা সেরা এমন নয়, কৃতিত্ব দেখিয়ে চলেছেন খেলার মাঠেও। দেশ-বিদেশে ফুটবল ও খোখো খেলেছেন। পুরস্কার ও সুনাম কুড়িয়েছেন দুহাত ভরে।
নাম ফাতেমা তুজ জোহরা ও জান্নাতুল ফেরদৌস। যমজ দুই বোন। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়—সব জায়গায় বিচরণ একসঙ্গে। দুজনই আবার ছোটবেলা থেকে খেলার পাগল। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এবারের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পদক পেয়ে আলোচনায় তাঁরা।
খেলাধুলা ও লেখাপড়া উভয় ক্ষেত্রেই কীভাবে সমান নৈপুণ্য দেখানো সম্ভব? ফাতেমা তুজ জোহরা বললেন, লেখাপড়ায় বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আর খেলাধুলায় অধ্যবসায় থাকতে হবে।
দুই বোনের মধ্যে ছোট ফাতেমা তুজ জোহরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তা নামে পরিচিত। পড়েছেন শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগে। স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করে পেয়েছেন চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক। গত বুধবার তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানের চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছ থেকে পদক ও সনদ গ্রহণ করেন।

বড় বোন জান্নাতুল ফেরদৌসের ডাক নাম রিক্তা। তিনিও পড়েছেন একই বিভাগে, একই সঙ্গে। ছোট বোনের কাছে হেরে দ্বিতীয় স্থানটা নিতে হয়েছে রিক্তার। পেয়েছেন ডিনস অ্যাওয়ার্ড। নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী রবার্ট হিউবারের কাছ থেকে পদক ও সনদ গ্রহণ করেন।

খেলার পাগল

বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় ২০১৬ সালে দুই বোনই তৃতীয় এশিয়ান খোখো চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে যান ভারতে। শুধু তা-ই নয়, মুক্তা ছিলেন দলের অধিনায়ক। সেই খেলায় বাংলাদেশ রানার্সআপ হয়েছিল।

আবার ২০১৩ সালে প্রথম বর্ষে পড়ার সময় দুই বোন অনূর্ধ্ব ১৯ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের হয়ে মালয়েশিয়ায় খেলতে যান। ওই বছরই ক্লাব কাপ ফুটবলে বিজেএমসিতে খেলার সুযোগ পান তাঁরা। অসামান্য নৈপুণ্য দেখানোর সুবাদে চাকরি পেয়ে যান দলটিতে। এ ছাড়া রিক্তা-মুক্তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অসংখ্য টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন। একাধিক সোনা ও রুপার পদক জিতেছেন। এসব সাফল্যের কৃতিত্ব কী কেবল তাঁদেরই?

বড় বোন রিক্তা বললেন, ‘সাফল্যের মূলমন্ত্র আমাদের বাবা। কখন খেলতে হবে আর কখন লেখাপড়ায় মন দিতে হবে— বাবারই শেখানো।’ রিক্তা বলেন, দুই বোনই এসএসসি পরীক্ষার সময় সাফ গেমসে এবং এইচএসসির সময় অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় ফুটবল দলে ডাক পেয়েছিলেন। বাবার পরামর্শে সেই সুযোগ পেছনে ফেলে পরীক্ষা দিয়েছেন। ফলে আজকের এই সফলতা।

মেয়েদের কৃতিত্বে অত্যন্ত খুশি বাবা মো. আকবর আলী। বাড়ি সাতক্ষীরা সদরে। সময়ে-সময়ে চেয়েছেন দুই মেয়ের পরিচয়েই তিনি সমাজে পরিচিত হবেন। ইতিমধ্যে পূরণ হয়েছে সেই ইচ্ছা।

আকবর আলী বললেন, ‘আমি মেয়েদের কখনো বলিনি, লেখাপড়া বা খেলাধুলায় তোমাদের প্রথম হতে হবে। শুধু তাদের বুঝিয়ে দিয়েছি যে সমাজে আমার যেন সম্মান নষ্ট না হয়। লেখাপড়া ও খেলাধুলা কতটা করলে আমার সম্মান বাড়বে, এটা তোমরাই ঠিক করো। আর কখন কী করা উচিত, সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি।’

দুই বোনের একটা অভিন্ন স্বপ্ন রয়েছে। পাশের দেশ ভারতে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বেশ জনপ্রিয়। অথচ আমাদের দেশে এ বিষয়ে পড়াশোনার বিষয়টি একাবারেই নতুন। দেশে এখনো তেমন ভালো শিক্ষক নেই। এই জায়গাতেই কাজ করতে চান রিক্তা-মুক্তা।