কার হাতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণ?

>
  • পেশাজীবীরা বলছেন, এর নিয়ন্ত্রণ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে থাকা উচিত
  • সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বলছে, এর নিয়ন্ত্রণ সমাজকল্যাণের হাতে থাকতে পারে
  • কার হাতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণ

একটি কাউন্সিলের মাধ্যমে ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন সেবায় জড়িত পেশাজীবীদের নিয়ন্ত্রণ নিতে যাচ্ছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। ‘বাংলাদেশ থেরাপি এবং রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন, ২০১৭’-এর মাধ্যমে এই কাউন্সিল গঠিত হচ্ছে। তবে পেশাজীবীরা বলছেন, নিয়ন্ত্রণ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকা বাঞ্ছনীয়।

পেশাজীবীদের অভিযোগ, এই আইনের খসড়া নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। খসড়ায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু শব্দের অস্পষ্টতা আছে। বিদ্যমান অন্য কাউন্সিলের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ বিষয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আইনটি চূড়ান্ত করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এই আইনের খসড়া তৈরি করেছে। গত মাসে একটি সভায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আইনের খসড়া উপস্থাপন করা হয়। এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আইনের বিভিন্ন ধারা নিয়ে তাদের মতামত সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ফিজিওথেরাপিস্টদের মূল কাজ শারীরিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে। শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সেবার বিষয়গুলো সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকেই দেখা হয়। পুনর্বাসন সেবাও সমাজকল্যাণের কাজ। তাই এ-সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হাতে রাখার কথা ভাবা হচ্ছে।

ফিজিওথেরাপিস্টদের পেশা নিবন্ধনের সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ নেই। ডিপ্লোমাধারী ফিজিওথেরাপিস্টদের নিবন্ধন দেয় বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ। কিন্তু বিএসসি কোর্স চালু হওয়ার পর বিএসসি ফিজিওথেরাপিস্টদের নিবন্ধন দেওয়া শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আইনসিদ্ধ ছিল না বলে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে নিবন্ধন দেওয়া বন্ধ করে অধিদপ্তর। কিন্তু বর্তমানে এঁদের কোনো নিবন্ধন কর্তৃপক্ষও নেই। বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ফরিদ উদ্দীন বলেন, ‘আমাদের জন্য একটি নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ থাকা খুব দরকার। ভারতসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে এই কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে। আমাদেরও তা হওয়া উচিত।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ২২ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত পুনর্বাসন সেবা পেশাজীবীদের প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সরকারের অটিজম ও নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদ হোসেন ফিজিওথেরাপিস্টসহ অন্য পুনর্বাসনভিত্তিক পেশাজীবীদের জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বা রেগুলেটরি বডি তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন। বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশন ওই সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। ওই সম্মেলনের পরই আইনের খসড়া তৈরির কাজ শুরু হয়।

মোটাদাগে তিনটি ব্যাপারে পেশাজীবীদের আপত্তি। তাঁরা বলছেন, ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন সেবা চিকিৎসাবিজ্ঞানের অবিচ্ছেদ্য বিষয়। এ বিষয়ে কোনো কাউন্সিল হলে তা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনেই হওয়া উচিত। চিকিৎসকদের জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি), নার্সদের জন্য বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিল, ফার্মাসিস্টদের জন্য বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল আছে। এগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে।

আইনের খসড়ার ওপর মতামতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, ‘যেহেতু প্রস্তাবিত কাউন্সিলের অন্তর্ভুক্ত সহায়ক পেশাজীবীগণ সরাসরি স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত, তাই উক্ত কাউন্সিলটি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন হওয়া উচিত।’ দ্বিতীয় আপত্তি প্রস্তাবিত কাউন্সিলের কাজের পরিধি নিয়ে। বিএমডিসি চিকিৎসকদের নিবন্ধন, ডিগ্রির স্বীকৃতি, ভুয়া চিকিৎসক হলে তাঁকে শাস্তি দান, পাঠ্যসূচি তৈরিতে সহায়তা, পেশার মান বৃদ্ধি—এসব করে। কিন্তু ক্লিনিক বা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয় না। সেই অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

তৃতীয় আপত্তি খসড়া আইনের দ্বিতীয় শব্দ ‘থেরাপি’ নিয়ে। পেশাজীবীরা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ এই আইনে না বুঝে ‘থেরাপি’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে থেরাপি বলতে অনেক চিকিৎসা ব্যবস্থাকে বোঝায়।

এ ব্যাপারে পেশাজীবী চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক ইহতেশামুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিকিৎসা-সংক্রান্ত এই আইন কীভাবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় করল, তা আমাদের বোধগম্য নয়। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের সঙ্গেও আইন নিয়ে আলোচনা হয়নি। কাজটি যথার্থ হয়নি।’