ফেসবুকে বন্ধুত্ব অতঃপর...

পরিচয় ও ছবি গোপন করে সাত মাস আগে ফেসবুকে নিজের চেয়ে দ্বিগুণ বয়সী নারীর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় এক তরুণের। দুই মাস পর নারীর ব্যক্তিগত ছবি সংগ্রহ করে তা ইউটিউবে ছেড়ে দেন তরুণটি। কয়েক দফায় তাঁর কাছ থেকে আদায় করেন সাড়ে তিন লাখ টাকা। আরও টাকা চাইলে মামলা করেন ওই নারী। গত বুধবার রাতে ইমরান সরকার (১৮) নামের ওই তরুণকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানায় ১ জুলাই তথ্যপ্রযুক্তি ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করা হয়। বগুড়া সদর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে তাঁকে চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়।

ইমরান চট্টগ্রামের একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করলেও বর্তমানে থাকেন বগুড়ায়। তিনি গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার নাগেরভিটা গ্রামের তাজ উদ্দিন সরকারের ছেলে।

চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইলিয়াছ খান প্রথম আলোকে বলেন, ইমরান ‘কাব্য শাহরিয়ার’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে মামলার বাদী ৩৮ বছর বয়সী নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। দুজনের সাক্ষাৎ না হলেও ওই নারী তাঁর ছবি ও ভিডিও দেন ইমরানকে। ব্যবসা করার জন্য অভিযোগকারী নারীর কাছ থেকে ২ লাখ টাকা ধার নেন তিনি। পরে ধারের টাকা চাওয়ায় ইউটিউবে ভিডিও ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন। পরে আরও ১ লাখ ৪০ হাজার দেওয়া হয় তাঁকে। টাকা পাঠানো হয় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে। কিন্তু গত জুন মাসে আরও ১ লাখ টাকা দাবি করেন ইমরান। ইতিমধ্যে নারী জানতে পারেন ইউটিউবে ভিডিও ছাড়ার কথা। পরে চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন ওই নারী। মামলাটির তদন্ত শুরু করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।

গতকাল দুপুরে নগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে ইমরান সাংবাদিকদের বলেন, শখের বসে ইউটিউবে ভিডিও ছেড়ে দিয়েছিলেন। এই ভুলের জন্য তিনি অনুতপ্ত।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইলিয়াছ খান বলেন, ইমরান প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ও জেএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছে। ২০১৪ সালে গাইবান্ধার গুগা আব্দুল জলিল হাইস্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করে চট্টগ্রামে চলে আসেন। গত বছর নগরের বেপজা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বগুড়া চলে যান। বগুড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করার পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার কোর্সও করছেন। গত বছর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও বিষয় পছন্দ না হওয়ায় ভর্তি হননি।

তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, পড়াশোনায় ভালো হলেও তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার ও অভিভাবকেরা সচেতন না হওয়ায় ইমরান এই প্রতারণার কাজে জড়িয়ে পড়ে। অভিভাবকদের সচেতনতার পাশাপাশি ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।