'মিরপুরে গ্যাসও থাকে না, পানিও থাকে না'

মিরপুরের বেশ কিছু এলাকার বাসিন্দারা গ্যাস ও পানির সংকটে ভুগছে। কোনো কোনো এলাকায় সূর্যের আলো ফুটতে না–ফুটতেই গ্যাস চলে যায়। আসে বিকেল বা সন্ধ্যার পরে।

কালশীর লালমাটিয়া, বাউনিয়া বাঁধ সি ও ডি ব্লক, ১১ নম্বরের পলাশনগর ও মদিনানগর, ১৩ নম্বরের ইমান নগর এলাকার বাসিন্দারা গ্যাস ও পানি উভয় সংকটেই ভুগছে। ১২ নম্বরের ডি ও ই ব্লক, ১২ নম্বরের মুরাপাড়া ক্যাম্পে শুধু গ্যাসের সমস্যা। আবার, ১১ নম্বরের সি ব্লকের অ্যাভিনিউ ফাইভ, ১১ নম্বরের ই ব্লকের বাসিন্দারা কেবল পানির সংকটের অভিযোগ করেছেন।
গ্যাস-পানির সংকটে ক্ষুব্ধ বাউনিয়াবাদ ডি ব্লকের বাসিন্দা মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘সমস্যার কথা কী কমু। মিরপুরে গ্যাসও থাকে না, পানিও থাকে না।’
গত রোববার মিরপুরের বিভিন্ন এলাকার কমপক্ষে ২০টি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, ভোরের দিকে গ্যাসের চাপ ভালোই থাকে। কিন্তু সাত-আটটার পরেই চাপ কমতে শুরু করে। কোথাও তিনটার পরে, কোথাও সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু হয়।
তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন লালমাটিয়া এলাকার নাঈমা বেগম। এ কারণে খুব ভোরে উঠতে পারছেন না। আর সাতটার কিছুক্ষণ পরেই গ্যাস চলে যায়। এতে বাসায় রান্না হয় না। সকালের নাশতা আর দুপুরে খাবারের জন্য তাই রেস্তোরাঁই ভরসা।
নাঈমা বেগমের শাশুড়ি হাজেরা বিবি বলেন, ঘরে ছয়জন মানুষ। প্রতিদিন সকালে নাশতায় আড়াই শ আর দুপুরে সাত শ টাকা খরচ হয়। এক দিনের দুই বেলার খাবারের খরচ পুরো এক মাসের গ্যাস বিলের থেকেও বেশি।
এদিকে কোনো কোনো এলাকায় গভীর রাত ছাড়া সারা দিনে পানি মেলে না। কোথাও আবার সকালে কিছু সময়ের জন্য থাকে। এ ছাড়া পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধের অভিযোগও করেছেন অনেকে।
১১ নম্বরের সি ব্লকের অ্যাভিনিউ ফাইভের বাসিন্দা শামীমা আক্তারের রান্নাঘরে এঁটো হাঁড়ি–বাসন সারি সারি করে রাখা দেখা যায়। বসার ঘরের পাশে ময়লা কাপড়ের উঁচু স্তূপ। পরিবারটি এখন বেশির ভাগ সময় কেবল একবার ব্যবহার উপযোগী থালা ব্যবহার করছে।
শামীমা আক্তার বলেন, ‘সাত-আট দিন ধরে লাইনে পানিই আসে না। কেনা পানি দিয়ে জরুরি কাজ চালাতে হয়। আর গোসল, ঘর মোছা বা কাপড় ধোয়ায় ভরসা অন্যের বাড়ি থেকে আনা করা পানি।’
পানি-গ্যাসের সমস্যায় যৌথ পরিবারগুলোর ভোগান্তি অনেক বেশি। তা ছাড়া এ সংকটের কারণে রান্না ও গৃহস্থালির কাজে নারীদের বেশি সমস্যা পোহাতে হচ্ছে।
গ্যাস ও পানির পেছনে দুই ধাপে খরচ করতে হয় বলে এলাকার অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বাউনিয়াবাদ সি ব্লকের বয়োজ্যেষ্ঠ বাসিন্দা রহমত আলী বলেন, ‘ওয়াসা, তিতাসকে বিল দেই। আবার, পানি দোকান থিক্যা কিন্যা খাইতে হয়। রান্নাতে সিলিন্ডার কেনা লাগে। ডাবল খরচ।’
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (জরুরি গ্যাস নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র—উত্তর) মো. এনামুল হক ভূঁইয়া বলেন, গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহের ঘাটতির কারণে রাজধানীর কোথাও না কোথাও গ্যাসের সমস্যা হচ্ছে। আগামী জুনের মধ্যে এই সংকট নিরসন হতে পারে।
তিতাস গ্যাসের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, সামগ্রিকভাবে দেশে গ্যাসের ঘাটতি ৩০০ মিলিয়ন। কাতার থেকে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা হলে সংকট কেটে যাবে বলে তাঁরা আশা করছেন।
আর পানির সমস্যার বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মো. কামরুল হাসান বলেন, নানা কারণে পানির সমস্যা হতে পারে। লোক পাঠিয়ে কারণ জেনে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে।