ভাঙচুরের পর এবার তছনছ

• হামলা হলো প্রকৌশল দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়ে
• প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তছনছ করল ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতার অনুসারীরা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয় এটি। গতকাল সকাল ১০টায় এই কার্যালয়ের বিভিন্ন নথি ও কাগজপত্র তছনছ করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির নেতা–কর্মীরা।  ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয় এটি। গতকাল সকাল ১০টায় এই কার্যালয়ের বিভিন্ন নথি ও কাগজপত্র তছনছ করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির নেতা–কর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত

ব্যাপক ভাঙচুরের পর দুই দিনের বিরতি। তৃতীয় দিন সকালে হামলা হলো প্রকৌশল দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়ে। তবে এবার আর ভাঙচুর নয়। কার্যালয়ের বিভিন্ন নথি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তছনছ করল ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতার অনুসারীরা। তাদের ক্ষোভের কারণ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদ ভবন সম্প্রসারণের জন্য আহ্বান করা প্রায় ২০ কোটি টাকার দরপত্রের কার্যাদেশ পায়নি তাদের নেতার পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
গতকালের তছনছ-কাণ্ডেও নেতা-কর্মীরা খুব বেশি সময় নেননি। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই কার্যালয়ের বিভিন্ন নথি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছুড়ে ফেলে এবং চেয়ার-টেবিল এলোমেলো করে দিয়ে গালিগালাজ করতে করতে চলে যান আট-নয়জন শিক্ষার্থী। ঘটনার সময় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সৈয়দ মো. জাহাঙ্গীর ফজল কার্যালয়ে ছিলেন না। দু-তিনজন কর্মচারী থাকলেও ভয়ে বাধা দেননি তাঁরা।
হামলাকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জানালেও তাঁদের দলীয় পরিচয় সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শীরা কিছু বলতে চাননি। শুধু এটুকু বলেছেন, তাঁরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেদ চৌধুরীর অনুসারী।
এর আগে গত মঙ্গলবার বিকেলে মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও নাট্যকলা বিভাগের ছয়টি শ্রেণিকক্ষ, প্রক্টরের কার্যালয়, বাস, মাইক্রোবাস, কার, পিকআপসহ ১৫টি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপুর অনুসারী ৩০-৪০ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ভাঙচুরে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মামলাও করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে প্রকাশ্যে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলেও মামলায় কারও নাম উল্লেখ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সৈয়দ মো. জাহাঙ্গীর ফজল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেদ চৌধুরী তাঁর পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে চেষ্টা করেন। ওই প্রতিষ্ঠানটি জীববিজ্ঞান অনুষদের তৃতীয় পর্যায়ের দরপত্রের কার্যাদেশ পায়নি বলে খালেদ তাঁর অনুসারীদের পাঠিয়ে আমার কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছেন।’ তিনি বলেন, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য হওয়ার কারণে তাঁর কার্যালয়ে এই হামলা হয়। এর আগে খালেদ তাঁকে ফোনে হুমকি দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করেন জাহাঙ্গীর ফজল।
অবশ্য এই অভিযোগের বিষয়ে এম এ খালেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, প্রকৌশল দপ্তরে কারা হামলা চালিয়েছে, তা জানেন না তিনি। কেউ হামলা চালালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট ছাত্রদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রকৌশল দপ্তর সূত্র জানায়, গত বছরের নভেম্বর মাসে জীববিজ্ঞান অনুষদ ভবনের অসমাপ্ত কাজ শেষ করা, ক্যাম্পাসে এক কিলোমিটার সড়ক সংস্কার এবং প্রশাসনিক ভবনের প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। ডালি কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তদবির করেন ছাত্রলীগের নেতা খালেদ চৌধুরী। তবে প্রতিষ্ঠানটি কাজ পায়নি। এ কারণে খালেদের অনুসারীরা কার্যালয়ে হামলা চালায়।
২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এম এ খালেদ চৌধুরী। তাঁর বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে মদনহাট এলাকায়। ক্যাম্পাসে তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মী রয়েছে।
এর আগে ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ভবন নির্মাণের দরপত্রকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে অন্তত ছয়বার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এসব ঘটনায় আহত হন ১০ নেতা-কর্মী। ওই বছরের ২০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেটের বাসা থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের ২২ দিন আগে দিয়াজসহ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের চার নেতার বাসায় তাণ্ডব চালানো হয়। দরপত্রের ভাগ-বাঁটোয়ারাকে কেন্দ্র করেই হামলা হয় বলে তখন পুলিশ বলেছিল।
সর্বশেষ গতকালের হামলার বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কামরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, মৌখিকভাবে তাঁরা অভিযোগ পেয়েছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রকৌশল দপ্তরে হামলার ঘটনায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবেন তাঁরা।

ভাঙচুরের ঘটনায় তদন্ত কমিটি
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতির অনুসারী নেতা-কর্মীদের হামলা ও তাণ্ডবের ঘটনায় গতকাল তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তদন্ত কমিটি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে বলে জানান উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।