প্রাণ জুড়িয়ে যাওয়া মুগ্ধতা

শুক্রবার বইমেলার চত্বর দৃশ্যত জনসমাবেশের আকার নিয়েছিল। সারা দিন তিন ধরনের ভিড় দেখা গেছে। বই পছন্দ করা, স্টল ঘুরে দেখা এবং নির্দিষ্ট বই কিনেই হাঁটা দেওয়া।

আজ শনিবার, শেষ ছুটির দিন। কর্মদিবসের কাজের ব্যস্ততার কারণে যাঁরা সময় করতে পারেন না, তাঁদের জন্য ভালো সুযোগ। আজ মেলার দ্বার খুলবে বেলা ১১টায়। পরিবারের লোকজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে চলে আসতে পারেন। বিক্রিবাট্টা রাত নয়টা পর্যন্ত চলবে। বেলা একটা পর্যন্ত মেলায় থাকবে শিশুপ্রহর।

শুক্রবার সন্ধ্যায় মনে হলো এ যেন বাংলা নববর্ষের সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রায় আসা মানুষের ঢল। তখন বইপ্রেমীদের মুখ-চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, সময় কম। তাই যা পারো এই বেলা দেখে কিনে নাও। বিদ্যাপ্রকাশের সামনে আড্ডা দিচ্ছিলেন দুই লেখক জাকির তালুকদার ও মোহিত কামাল। পরিচিত একজন এসে বললেন, বাহ্, দুই ডাক্তারকে একসঙ্গে পাওয়া গেল। মোহিত কামাল আপত্তি করলেন। বললেন, না, দুই ঔপন্যাসিক। কথা প্রসঙ্গে মোহিত কামাল বললেন, ‘আজ আমার জীবনের সুন্দরতম দিন দেখলাম। মেলায় ঢোকার আগে দেখলাম বিশাল লাইন ধরে শিশুরাও ঢুকছে মেলায়। প্রাণ জুড়িয়ে গেল তাদের দেখে।’

মোহিত কামালের মুগ্ধ হওয়ার এই দৃশ্য গতকাল সারা দিন দেখা গেছে। এমনটাই হয় বইমেলার শেষ সপ্তাহে। আসলে শেষ সপ্তাহের বইমেলাটা যেন জীবনানন্দের পঙ্‌ক্তি মেনে চলে, ‘কেবলই দৃশ্যের জন্ম হয়’। আর যে দৃশ্য বরাবর ঘুরে ঘুরে আসে, তা হলো কয়েকটি বড় প্রকাশনা সংস্থার প্যাভিলিয়নের চারপাশে ভিড়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলা প্রাঙ্গণের ঠিক মাঝখানে প্রথমা প্রকাশনের চারপাশে ভিড় দেখা গেল। শুক্রবারের প্রথম আলোর অংশ নিয়ে সেখান থেকে বইয়ের তালিকা দেখে কিনতে দেখা গেল বেশ কয়েকজন পাঠককে। এখানেই দেখা হলো ধানমন্ডি থেকে আসা দুই ভাই আইয়াজ আর মাসনুনের সঙ্গে। প্রথমা থেকে কিনেছে গোপাল ভাঁড়ের ৫ ডজন গল্প, নাসিরুদ্দিন হোজ্জার আরও ১০০, আব্দুল কাইয়ুমের গণিতের ধাঁধা। মেলা ঘুরে ঘুরে দুজনেরই চোখে-মুখে ক্লান্তি। ক্লান্তি লাগছে নাকি—প্রশ্ন শুনে ছোট ভাই আইয়াজ যেন নতুন করে চাঙা হলো, ‘নাহ্, আমার চেহারাটাই এমন!’ ওদের বাবা শহিদুল ইসলাম কিনছেন সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.): মহানবীর প্রথম বিশদ জীবনী বইটি।

মেলায় গতকাল এসেছে ২৬৬টি নতুন বই। গতকালই মেলায় বাংলা একাডেমি এনেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারাগারের রোজনামচার ইংরেজি সংস্করণ। মূল বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন অধ্যাপক ফকরুল আলম। প্রথমা এনেছে অধ্যাপক এ কে আজাদ খানের সড়কপথে অক্সফোর্ড থেকে ঢাকা বইটি। এ ছাড়া মেলায় মাওলা ব্রাদার্স এনেছে আনু মুহাম্মদের উন্নয়নের বৈপরীত্য সর্বজনের সম্পদ কতিপয়ের মালিকানা, আগামী এনেছে ফারুক ওয়াসিফের বিস্মরণের চাবুক, চন্দ্রাবতী একাডেমি এনেছে জাকির তালুকদারের কিশোর উপন্যাস গাঁয়ের নিবাস নায়ের নিবাস, বেহুলা বাংলা এনেছে শান্তনু চৌধুরীর উপন্যাস সূর্যোদয়ের আগে, নন্দিতা প্রকাশ এনেছে প্রণব মজুমদারের শিশুতোষ গল্প হুলুস্থুল, ভাষাচিত্র এনেছে মেসবাহ য়াযাদের উপন্যাস পোস্টমর্টেম, দেশ পাবলিকেশনস এনেছে ইশতিয়াক আহমেদের ল্যান্ডফোন, হাবীবাহ্ নাসরীনের তুমি আমার শুদ্ধতম পাপ। দুই বাংলার লেখকদের গল্প নিয়ে শত কথার শত গল্প বইটি এনেছে স্বপ্ন ’৭১। আবু সাঈদ সম্পাদিত বইটি পাওয়া যাচ্ছে লিটলম্যাগ চত্বরে। জোনাকী প্রকাশনী এনেছে মামুন মিজানুর রহমানের গল্পগ্রন্থ দ্রৌপদীর ভেতর-বাহির। কথা প্রকাশ এনেছে রাজীব সরকারের কবি সব করে রব, অয়ন প্রকাশন এনেছে মাহবুব হাসান জ্যোতির অঘোর ছায়া