ড্রোন 'বাঁচাবে' জীবন, গতিরোধক থেকে বিদ্যুৎ

চট্টগ্রামে ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় উড়ছে ড্রোন। এটি তৈরি করেছেন চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তিন শিক্ষার্থী। গতকাল বিকেল সাড়ে তিনটায় নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম–সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠে।  ছবি: জুয়েল শীল
চট্টগ্রামে ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় উড়ছে ড্রোন। এটি তৈরি করেছেন চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তিন শিক্ষার্থী। গতকাল বিকেল সাড়ে তিনটায় নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম–সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠে। ছবি: জুয়েল শীল
• চট্টগ্রামে ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা
• শুক্রবার থেকে শুরু তিন দিনের মেলায় অংশ নিয়েছে ১৩১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

আগুন ধরেছে কোনো ভবনে। দমকা হাওয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশে। ফায়ার সার্ভিস আসতে আসতেই শেষ হয়ে যেতে পারে সবকিছু। এমন যখন পরিস্থিতি, জীবন রক্ষাকারী ড্রোনটিই হতে পারে বড় ভরসা। সেটি ঘটনাস্থলের ওপরে গিয়ে ছেড়ে দিতে পারবে ‘আগুন নির্বাপণ বল’। সঙ্গে থাকা ক্যামেরা চিহ্নিত করতে পারবে ভবনের ভেতরে কারা আছে। এতে নিভে যেতে পারে আগুন, বাঁচবে মানুষের প্রাণ।

শুধু আগুন নেভানো নয়, এই ড্রোন কাজ করবে আরও বিভিন্নভাবে। যানজট নিয়ন্ত্রণ, বোমা ও মাইন চিহ্নিত করা, অপরাধীদের গতিবিধি ক্যামেরায় ধারণসহ নানান কাজ। রিমোটের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে যন্ত্রটি।
এই ড্রোনটি উদ্ভাবন করেছেন চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিকস বিভাগের তিন শিক্ষার্থী। তাঁরা হলেন জাহেদ হোসাইন, তানভীর হাসান ও ফাহিম জাওয়াদ।

গতকাল শুক্রবার থেকে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামসংলগ্ন জিমনেসিয়ামের পাশের মাঠে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় তাঁরা ড্রোনটি নিয়ে আসেন।
তিন শিক্ষার্থী বলেন, ড্রোনটি তৈরির পেছনে তাঁদের এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এটি এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কাজ করতে পারবে। ড্রোনটির আরও উন্নয়ন ঘটালে এটি ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কাজ করতে পারবে।

জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এই মেলায় সার্বিক তত্ত্বাবধান করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই (অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন) প্রজেক্ট।
মেলায় ১৩১টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সেবা সম্পর্কে দর্শনার্থীদের জানাচ্ছিল। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা তাঁদের উদ্ভাবন করা বিভিন্ন প্রযুক্তি মেলায় প্রদর্শন করেন।

বেসরকারি পোর্ট সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক ক্লাবের শিক্ষার্থীরা বানিয়েছেন গতিরোধক থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন যন্ত্র। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, তাঁদের ক্লাবে ৮৬ জন সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক সাদেকুর রহমান ভূঁইয়ার তত্ত্বাবধানে ছয়জন শিক্ষার্থী এই যন্ত্রটি বানান।

শিক্ষার্থীরা বলেন, যন্ত্রটি গতিরোধক হিসেবে সড়কে বসানো যাবে। যখন যন্ত্রটির ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচল করবে তখন গতিরোধকটির ওপর চাপ পড়লে তা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। সেই বিদ্যুৎ জেনারেটরের সাহায্যে ব্যাটারিতে জমা করা হবে। পরে সেই বিদ্যুৎ রাতে সড়কের দুই পাশের আলোকসজ্জার কাজে ব্যবহার করা যাবে।

চট্টগ্রাম মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তিন শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার, নাহিন আক্তার ও সুমাইয়া শিউলি উদ্ভাবন করেছেন অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সাহায্য ঘরের বাতি নিয়ন্ত্রণ করার সফটওয়্যার। তাঁদের বক্তব্য, এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ অপচয় রোধ করা যাবে।
এর আগে দুপুর ১২টায় মেলার উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান। জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মনির উজ জামান, নগর পুলিশের কমিশনার মো. ইকবাল বাহার, চট্টগ্রামের জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা, সিভিল সার্জন মো. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. হাবিবুর রহমান।

মেলায় সেমিনার, প্যানেল আলোচনা, কুইজ প্রতিযোগিতাসহ নানা আয়োজন থাকছে। কাল রোববার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে এই মেলা।