যেভাবে ঘটনা ঘটেছে

>• ঘটনাটি ৫টা ২০ মিনিটের দিকে ঘটেছে।
• মুহম্মদ জাফর ইকবাল দর্শকসারিতে ছিলেন।
• জাফর ইকবালের পেছন থেকে অতর্কিত হামলা।
• হামলার পর যুবককে ধরে গণপিটুনি।

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে শনিবার এক যুবকের অতর্কিত হামলায় ছুরিকাহত হন লেখক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারায় থাকা সত্ত্বেও গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে এক অনুষ্ঠান চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল তখন দর্শকসারিতে ছিলেন।

ঘটনা সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ‘ট্রিপল-ই ফেস্টিভ্যাল’-এর সমাপনী অনুষ্ঠান চলছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল অনুষ্ঠানের অতিথি ছিলেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে রোবটিকস গেম দেখতে তিনি দর্শকসারিতে গিয়ে বসেন। এ সময় পেছন থেকে এক যুবক মুহম্মদ জাফর ইকবালের পেছন থেকে অতর্কিত হামলা চালায়।

হামলার ঘটনা প্রথম দেখেন ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান খান। হাসপাতালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্যারের পেছনে এক যুবক উপর্যুপরি আঘাত করছে, আর স্যার হাত দিয়ে ফেরানোর চেষ্টা করছেন। এই অবস্থায় রক্ত দেখে চিৎকার দিই। তখন স্যারের সঙ্গে থাকা গানম্যান দুজন এগিয়ে আসার আগেই যুবক দৌড় দেয়।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অনুষ্ঠানস্থলে হামলকারী আগেই অবস্থান করছিল। জাফর ইকবাল যখন দর্শক সারিতে বসেন, তার আশপাশে যুবককে দেখেছেন অনেকেই। পেছনে দাঁড়ানো অবস্থায়ও হামলাকারীকে দেখা গেছে। এ রকম একাধিক ছবি ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যুবকটির আরও কেউ থাকতে পারে। হামলার পর যুবককে ধরে গণপিটুনির সময় হয়তো অন্যরা পালিয়ে গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ইলিয়াসউদ্দিন বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা স্যারকে ধরে মাইক্রোবাসে করে হাসপাতালে নিয়ে আসি।’ হামলার ঘটনাটি ৫টা ২০ মিনিটের দিকে ঘটেছে বলে তিনি জানান।

রক্তাক্ত অবস্থায় মুহম্মদ জাফর ইকবালকে দেখে আশপাশ এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষুব্ধ ছাত্ররা ছুরিকাঘাতকারী যুবককে দৌড়ে ধরে ফেলেন। পিটুনি দেওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য ও পুলিশ ওই যুবককে শিক্ষা ভবনের একটি কক্ষে নিয়ে যান। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মহানগর পুলিশের মাধ্যমে একজন চিকিৎসক যুবকটির শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। রাত নয়টার সময় ওসমানী হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ভবনে যুবকটিকে একনজর দেখে এসে বাইরে মাইকে ঘোষণা দেন যে তার অবস্থা খুবই খারাপ। চিকিৎসা না দিলে প্রাণহানির আশঙ্কা আছে। এ জন্য ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সহায়তা চান।

ঘটনার পরে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শিক্ষা ভবন ঘিরে ক্ষুব্ধ ছাত্ররা অবস্থান নেন। ছাত্রলীগ ও ছাত্রফ্রন্ট তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করে হামলাকারী যুবকের পরিচয়, হামলার কারণ ও নেপথ্যে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।

মুহম্মদ জাফর ইকবালের নিরাপত্তায় দুজন পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক সঙ্গে থাকেন। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, অনুষ্ঠানস্থলের ভেতরে হামলা হওয়ায় সময় কর্তব্যরত দুই পুলিশ সদস্য অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওই দুই পুলিশ সদস্য হামলাকারী যুবককে ধরার সময় আহত হয়েছেন বলে মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানা ‍সূত্র জানিয়েছে।

মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব প্রথম আলোকে বলেন, হামলার সময় যুবকটির পরনে জিনসের প্যান্ট ও একটি টি-শার্ট ছিল। ২৪-২৫ বছর বয়স, মুখে হালকা দাঁড়ি। প্রাথমিকভাবে বহিরাগত বলে ধারণা করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পুলিশের নিরাপত্তা ভেদ করে হামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।