কাউকে দোষারোপ করতে চাই না: ইয়াসমিন হক

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক।

‘আমার ওপর হামলা হয়েছে। আমি সুস্থ আছি। আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। আমি চাই না তোমরা টিভিতে খবর পাও, এ জন্য বলছি। অনেক ব্লিডিং হচ্ছে। আমি যদি পরে কথা বলতে না পারি। ...এ জন্য...আমি ফাইন আছি।’ হামলার শিকার হওয়ার পর গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে পাঁচটার দিকে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল নিজেই তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিন হকের কাছে ফোন করে এসব কথা বলেন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সামাল দেওয়ার জন্যও স্ত্রীকে আহ্বান জানান জাফর ইকবাল।

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) অধ্যাপক জাফর ইকবালের শারীরিক অবস্থা নিয়ে ব্রিফিংয়ের পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান তাঁর স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক।

জাফর ইকবাল সুস্থ হয়ে আবারও ক্যাম্পাসে ফিরবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে অধ্যাপক ইয়াসমিন হক বলেন, ‘আমি ভাবছি তিনি ক্যাম্পাসে ফিরে যাবেন। তাঁর পাঁচটা কোর্স আছে। তাঁকে চলে যেতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘শুরু থেকেই আমি আর আমার মেয়ে অনেক শান্ত ছিলাম। যেহেতু আমাদের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমার কি অনেক ব্যথা করছে নাকি? তখন জাফর ইকবাল বলেন, এখন একটু একটু ব্যথা করছে। তবে তোমাদের চিন্তা করার কোনো কারণই নেই। বারবারই তিনি আমাদের উদ্বিগ্ন না হতে বলেছেন।’

ঢাকা সিএমএইচের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়ার সময় স্বামীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল উল্লেখ করে ইয়াসমিন হক বলেন, ‘জাফর ইকবাল তাঁকে বলেছেন, তুমি একটা কথাই বলো। আমার ছাত্রদের খবর দাও। ওরা যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা না করে। তাদের সান্ত্বনা দাও।’

প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে ইয়াসমিন হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গেই উদ্যোগ নিয়ে তঁকে এখানে নিয়ে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে খোঁজখবর নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে, ২৪ ঘণ্টা তাঁর সঙ্গে কারও দেখা না করাতে। আমিও দেখা করছি না।’

সিলেটের ওসমানী মেডিকেল ও ঢাকা সিএমএইচের চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরের চিকিৎসক ছিলেন। হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকেরা অনেক রাত পর্যন্ত থেকে এত সেবা করেছেন। আমি কোনোভাবে তাঁদের ধন্যবাদ না দিয়ে পারব না। জাফর ইকবাল সুস্থ আছেন। অনেক ভালো কেয়ার নেওয়া হচ্ছে। আমার টোটালি ভরসা আছে, ওনারা এখানে সর্বোচ্চটাই করবেন।’

পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে থেকেও হামলার শিকার হলেন, এটাকে কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে অধ্যাপক ইয়াসমিন হক বলেন, ‘২৪ ঘণ্টাই আমাদের সঙ্গে পুলিশ থাকে। আমি মনে করি না এটার জন্য সঙ্গে সঙ্গেই এসে সরকারকে দোষারোপ করতে হবে। আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, জাফর ইকবাল পুলিশ পরিবারের সন্তান। পুলিশ দুই বছর ধরে আমাদের সঙ্গে রয়েছে, নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে। সব সময়ই তারা অসম্ভব আন্তরিক। কখনো এমন হয়েছে, জাফর ইকবাল নিজেই পুলিশ সদস্যদের চলে যেতে বলত। সে ভাবত, তাকে বেশিই নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ ঘটনাটা ঘটে গেছে। সেখানে একটা উৎসব চলছে, শত শত শিক্ষার্থী আনন্দ করছে। এখানে এ ঘটনাটা ঘটেছে। এখন পুলিশ তদন্ত করবে। আমরা খবর পেয়েছি, পুলিশের এসবির একজন হামলাকারীকে ঠেকাতে গিয়ে আহত হয়েছেন। আমি কাউকে দায়ী করি না।’

এখন শঙ্কিত কি না জানতে চাইলে অধ্যাপক ইয়াসমিন হক বলেন, ‘আমাদের তো বছর বছর ধরে হুমকি দিচ্ছে, কাফনের কাপড় পাঠাচ্ছে। এখন আমরা তো আর নিজেদের কারাগারে বন্দী করে রাখতে পারি না। পুলিশদের জাফর ইকবাল বারবার বলেছে, শিক্ষার্থীদের যেন তার কাছে যেতে বাধা না দেওয়া হয়। এখনো তার কক্ষে যেকোনো শিক্ষার্থী যেতে পারে। আমরা আমাদের স্টুডেন্টদের সঙ্গে ফ্রিলি ইন্টার‍্যাক্ট করাব।’