
৭ মার্চ রাজধানীতে কলেজছাত্রীকে হয়রানি করা ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে গতকাল শনিবার শাহবাগে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বিতর্ক সংগঠনের সদস্যরা বিক্ষোভ করেছেন। অন্যদিকে এ ঘটনার সময় ট্রাফিক পুলিশের যে সদস্য ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করেছিলেন, তদন্তকারীরা তাঁকে খুঁজছেন।
গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিতার্কিক সমাজের ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বিতার্কিকেরা জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন শেষে ছাত্রী নিপীড়নকারীদের বিচারের দাবিতে তাঁরা মিছিল বের করেন। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে গিয়ে শেষ হয়। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তালিব হাসান রিজভী বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ। এর জন্য শুধু আইন প্রয়োগ করে লড়াই হবে না, এর সঙ্গে সাংস্কৃতিক আন্দোলনও লাগবে। কারণ, রাষ্ট্র আইন প্রয়োগ ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ।’
ছাত্রী শ্লীলতাহানির ঘটনায় করা মামলাটি তদন্ত করছে রমনা থানার পুলিশ। মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মারুফ হোসেন সরদার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। নিপীড়নের শিকার ছাত্রীটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, মামলায় শ্লীলতাহানির শিকার হওয়ার যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, সেটিই তাঁর বক্তব্য।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, ঘটনাস্থল বাংলামোটরের কাছে ৮৯ নিউ ইস্কাটনের কথা বলা হচ্ছে, সেদিন কোনো পুলিশের দায়িত্ব ছিল না। হয়তো ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় কোনো ট্রাফিক কনস্টেবল ছাত্রীটিকে সহায়তা করেছেন। বখাটেদের কবল থেকে রক্ষাকারী সেই কনস্টেবলকে ছাত্রীটি চেনেন না কিংবা তাঁর নামও বলতে পারছেন না। তাঁকে পাওয়া গেলে ঘটনার প্রকৃত চিত্র জানা যাবে এবং মিছিল থেকে ছাত্রীর ওপর হামলে পড়েছিল কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।
মামলার ছায়া তদন্ত করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ডিবি সূত্র বলেছে, ভিডিও ফুটেজ দেখে একজন কনস্টেবলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, তাঁর সামনে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ডিবির উপকমিশনার (দক্ষিণ) মো. জামিল হাসান গতকাল বলেন, যেখানে ঘটনার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে কোনো সিসি ক্যামেরা নেই। আশপাশের দোকান থেকে ছয়-সাতটি সিসি ক্যামেরা জব্দ করা হয়েছে। বাংলামোটরের দিকে হেঁটে যাওয়ার সময় ছাত্রীটির সামনের ও পেছনের দিকের ফুটেজ নেওয়া হয়েছে। এসব ফুটেজে সাধারণ মানুষের সঙ্গে পোশাকধারী কয়েকজন পুলিশকে হেঁটে যেতে দেখা যাচ্ছে। সেদিন যে পুলিশ সদস্য ছাত্রীটিকে সহায়তা করেছেন, ছাত্রীকে দিয়ে তাঁকে শনাক্ত করা হবে। ওই পুলিশ সদস্য শনাক্ত হলে বিস্তারিত জানা যাবে। আজ রোববার ছাত্রীটি ও তাঁর বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে।
গত বুধবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকার সময় নিপীড়নের শিকার হন রাজধানীর এক কলেজছাত্রী। সরকারি দলের মহাসমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার সময় মিছিল থেকে একদল যুবক তাঁকে নিপীড়ন করে বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রীটি। পরে ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে রমনা থানায় তাঁর মেয়ের শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন।