আগেভাগেই চাঙা মশারির ব্যবসা

অনেকে পছন্দের কাপড় ও মাপ দিয়ে মশারি বানিয়ে নিচ্ছেন। তাই ব্যস্ততা বেড়েছে মশারি তৈরির কারিগরদের। গতকাল কারওয়ান বাজারে। প্রথম আলো
অনেকে পছন্দের কাপড় ও মাপ দিয়ে মশারি বানিয়ে নিচ্ছেন। তাই ব্যস্ততা বেড়েছে মশারি তৈরির কারিগরদের। গতকাল কারওয়ান বাজারে। প্রথম আলো

• এখনো অধিকাংশ মানুষের ভরসা মশারিতে।
• এ বছর মশার উপদ্রব আগে থেকেই শুরু হয়েছে।
• গরমের মৌসুম শুরুতেই মশারির চাহিদা বেড়েছে।
• কয়েল, অ্যারোসল, ব্যাটের বিক্রিও জমজমাট।

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতেও কারওয়ান বাজার ২ নম্বর সুপার মার্কেটের বিল্লাল হোসেন দৈনিক চার-পাঁচটার বেশি মশারি বানানোর কাজ পাননি। এখন মার্চের প্রায় মধ্যভাগে এসে তাঁর এক মুহূর্ত অবসর নেই। কোনো কোনো দিন ২০ টির মতো মশারি বানানোর কাজ করতে হয় তাঁকে।

একইভাবে গত দুই-তিন সপ্তাহে প্রস্তুতকৃত মশারি বিক্রির পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ার কথা জানিয়েছেন রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। এর পাশাপাশি মশক নিধন ও নিয়ন্ত্রণের উপকরণ কয়েল, অ্যারোসল এবং ব্যাটের চাহিদাও বেড়েছে।

মশক নিয়ন্ত্রণের জন্য নানা আধুনিক ব্যবস্থা থাকলেও এখনো অধিকাংশের ভরসা মশারিতে। মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরের ফুটপাত, নীলক্ষেত, গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট এবং কারওয়ান বাজারের দোকানিরা বলছেন, গত বছরের এপ্রিল-মে মাসে চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার পর মশারিসহ মশক নিয়ন্ত্রণের আনুষঙ্গিক পণ্যগুলোর বিক্রি ব্যাপক হারে বেড়েছিল। এ বছর মশার উপদ্রব আগে থেকেই শুরু হয়েছে। তাই গরমের মৌসুম শুরুতেই মশারির চাহিদা বেড়েছে।

বিভিন্ন এলাকার দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সুতা ও নকশার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের মশারির দাম ১২০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। বিক্রেতারা বলছেন, রাজধানীতে মশারির পাইকারি বাজারের একটি ২ নম্বর গাউছিয়া মার্কেট। অন্যটি ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেটে। মূলত এই দুটি স্থান থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার দোকানিরা মশারি বা মশারি তৈরির কাপড় কেনেন।

গত শনিবার দুপুরে সিটি সুপার মার্কেটে গিয়ে দেখা গেছে, বহুতলবিশিষ্ট মার্কেটটির নিচতলায় মশারির পাইকারি বাজার। এখানে ১৫-১৬টি দোকানে শুধুই মশারি ও মশারি তৈরির কাপড় বিক্রি হয়। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে দোকানপ্রতি দৈনিক গড়ে ৩০ হাজার টাকার মশারি ও মশারির কাপড় বিক্রি হয়। দুই সপ্তাহ আগেও দৈনিক বিক্রি পাঁচ-সাত হাজার টাকার বেশি ছিল না। ঢাকার ব্যবসায়ীদের বাইরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও ব্যবসায়ীরা এখান থেকে মশারি ও মশারির কাপড় কিনে থাকেন।

মার্কেটের ইসরাইল এন্টারপ্রাইজের কর্মচারী মাহবুবুর রহমান বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেও তাঁদের দোকানে দৈনিক ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার বেশি বিক্রি ছিল না। মার্চের এ কয়েক দিনে বিক্রি গড়ে ৪০ হাজার টাকায় পৌঁছেছে। ব্রাদার্স বেডিং স্টোরের মালিক নুরুল আমিনের ভাষ্য, সাধারণত এপ্রিল থেকে শুরু হয় ব্যবসার মূল মৌসুম। এবার মশার উৎপাত আগেই শুরু হয়েছে, ব্যবসাও আগে থেকে চাঙা।

মার্কেটের স্বাগতম মশারি স্টোরের মালিক মুসলিম মজুমদার জানান, ম্যাজিক মশারির চাহিদাই সবচেয়ে বেশি ক্রেতাদের মাঝে। এগুলোর ভেতরে বাতাস সহজে ঢোকে। কিন্তু তেমন টেকসই না। তাই অনেক ক্ষেত্রে বছর না ঘুরতেই এটা পরিবর্তন করতে হয়।

কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী হজরত আলী ফুটপাতে মশারির বাইরেও নানা ধরনের বিছানার চাদর বিক্রি করেন। তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে দিনে ৮ থেকে ১০ পিসের বেশি মশারি বিক্রি হয় না। এখন প্রায় প্রতিদিন ১৫ পিসের বেশি বিক্রি হচ্ছে। একই কথা জানান মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকার ব্যবসায়ী মফিজুল হক।
কারওয়ান বাজার ২ নম্বর সুপার মার্কেটের দিপু ভ্যারাইটিজ স্টোরে মশারি বানাতে এসেছিলেন নাখালপাড়ার বাসিন্দা আতিকুল ইসলাম। ৭ ফুট বাই ৬ ফুট আকারের একটি মশারি বানাতে তাঁর খরচ পড়ছে সাড়ে ৭০০ টাকা। তিনি বলেন, ‘গত বছর বাজার থেকে দুটি রেডিমেড মশারি কিনেছিলাম। দ্রুত সেগুলো ছিঁড়ে যাওয়ায় এবার কাপড় পছন্দ করে বানিয়ে নিচ্ছি।’

কয়েল, অ্যারোসল, ব্যাটের বিক্রিও জমজমাট
মশারির পাশাপাশি বেড়েছে কয়েল, অ্যারোসল ও বৈদ্যুতিক ব্যাটের ব্যবহার। শহরের বিভিন্ন এলাকার দোকান ও পাইকারি মার্কেটের ব্যবসায়ী এবং উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিরা বলছেন, নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে কয়েলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। অন্যরা অ্যারোসল ও বৈদ্যুতিক কয়েলে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

মশার কয়েল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গ্লোব ইনসেক্টিসাইডস লিমিটেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) আতিকুর রহমান বলেন, এটা মশার প্রজনন মৌসুম। সাধারণত এই সময়েই কয়েলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। সে হিসেবে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কয়েল বিক্রির পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।

গুলিস্তানের সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত কয়েক বছরে দেশের মশা মারার বৈদ্যুতিক ব্যাটের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। চীন থেকে আমদানি করা এসব ব্যাটের দাম ২১৫-৪০০ টাকার মধ্যে।