যুক্তরাজ্যে শিক্ষক ধর্মঘটে বিপাকে বিদেশি শিক্ষার্থীরা

কুইনমেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষকেরা। ছবিটি সোমবার সকালে তোলা। ছবি: প্রথম আলো
কুইনমেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষকেরা। ছবিটি সোমবার সকালে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

পেনশন কর্তনের প্রতিবাদে ধর্মঘট করছে যুক্তরাজ্যের ৬৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। ফলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশ কোর্সের পড়াশোনা স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা। যার মধ্যে আছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত মোট ১৪ দিনের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে শিক্ষকদের ইউনিয়ন ‘দ্য ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজ ইউনিয়ন’ (ইউসিইউ)। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জোট ‘ইউনিভার্সিটিজ ইউকে’র সঙ্গে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর শিক্ষক ধর্মঘটের ডাক দেয় ইউসিইউ। দাবি আদায় না হলে এই আন্দোলনের পরিধি আরও বাড়বে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

ধর্মঘটের ফলে ক্লাস না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা হবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আবার নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা নিতে গেলে বাদ পড়া ক্লাসগুলো পূরণ প্রায় অসম্ভব। সব মিলিয়ে শিক্ষকদের এই আন্দোলন মহা অনিশ্চয়তায় ফেলেছে শিক্ষার্থীদের।

বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিপদ আরও বেশি। সময় মতো কোর্স সম্পন্ন না হলে অনেক শিক্ষার্থীকে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জটিলতায় পড়তে হবে। এ জন্যে বাড়তি খরচের চাপে পড়তে হবে তাদের।

সোমবার সকালে কুইনমেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ভিড় দেখা যায়। সেখানে তারা শিক্ষার্থীদের হাতে তাদের আন্দোলনের কারণ সংবলিত লিফলেট ধরিয়ে দিচ্ছেন।

‘ব্রিটিশ পলিটিকস’ বিষয়ের শিক্ষক জেমস স্ট্রোঞ্জ প্রথম আলোকে বলেন, পেনশনে অন্যায্য পরিবর্তন আনার ফলে তারা অবসরজীবনে বছরে ১০ হাজার পাউন্ডের (প্রায় ১২ লাখ টাকার সমপরিমাণ) ক্ষতির শিকার হবেন। যা ১২ শতাংশ বেতন কর্তনের সমান। তিনি বলেন, তিনি পাঁচ বছর আন্দোলন করলে যে পরিমাণ বেতন বঞ্চিত হবেন, পেনশন পরিবর্তনের ক্ষতি তার চাইতেও বেশি। শিক্ষার্থীদের ক্ষতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অন্যায্য পদক্ষেপ এবং আলোচনায় রাজি না হওয়াই এর জন্য দায়ী।

কুইনমেরি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বিজনেস ম্যানেজমেন্ট’ বিষয়ে শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী বাংলাদেশি সুদীপ্ত কর্মকার। তাঁর ক্লাসের তিন শ শিক্ষার্থীর ৬০ শতাংশই বিদেশি। আসছে এপ্রিলে তাঁদের কোর্স সম্পন্ন হওয়ার কথা। গত শনিবার টেলিফোনে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, নয় দিনের ধর্মঘটে তাঁর ১৮টি ক্লাস বাতিল হয়েছে। ১৬ মার্চ পর্যন্ত ধর্মঘট চললে আরও নয়টি ক্লাস হবে না। নিয়মিত ক্লাস ও এসেসমেন্টের পাশাপাশি বাদ পড়া ক্লাসগুলো পূরণ অসম্ভব।

বাংলাদেশি এই শিক্ষার্থী মনে করেন পরীক্ষা পেছানোর সুযোগ নেই। কারণ সেমিস্টারগুলো একের পর এক চলতে থাকে। এক ব্যাচ কোর্স শেষ না করলে নতুন ব্যাচ শুরু করতে পারবে না। তবে অনেকগুলো ক্লাস না করেই তাদের পরীক্ষায় বসতে হবে।
সুদীপ্ত কর্মকার বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য নেই। তবে পরীক্ষার ফলাফলে যাতে এর প্রভাব না পড়ে সেটি নিশ্চিত করার আশ্বাস দিচ্ছে তারা।

সুদীপ্ত জানান, বাদ পড়া ক্লাসগুলো হিসাব করে বেতন ফেরত দেওয়ার দাবি তুলেছে শিক্ষার্থীরা।

কিংস কলেজে বায়োলজি শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ইয়ারা। আসছে জুন মাসে তাঁর কোর্স সম্পন্ন হওয়ার কথা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‍শিক্ষক ধর্মঘটের কারণে ইতিমধ্যে তাঁর ৮টি ক্লাস বাতিল হয়েছে। ১৬ মার্চ পর্যন্ত ধর্মঘট চললে আরও ৮টি ক্লাস বাতিল হবে। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে কিংস কলেজ কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে বেতনের একটি অংশ ফেরত দিতে সম্মত হয়েছে বলে জানান ইয়ারা।

যুক্তরাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মোট ১৩০টি। এর মধ্যে ১৯৯২ সালের আগে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ৬৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পেনশন পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ৬৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ধর্মঘটের পক্ষে ভোট দিয়েছেন এবং আন্দোলনে নেমেছেন।