১২ শতাংশ কিশোর-কিশোরী ধূমপানে আসক্ত

দেশের প্রায় ১২ শতাংশ কিশোর-কিশোরী নিয়মিত ধূমপানে আসক্ত। এর মধ্যে ৯ শতাংশ কিশোর এবং কিশোরী ৩ শতাংশ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) উদ্যোগে পরিচালিত জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক ‘দ্য গার্ডিয়ান’ সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে বিভিন্ন দেশে ‘গ্লোবাল ইয়ুথ টোব্যাকো জরিপ’ শিরোনামে একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের মধ্যে পরিচালিত এ জরিপ প্রতিবেদন ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীদের ধূমপান প্রবণতাসহ বিভিন্ন পন্থায় তামাকজনিত পণ্যের ব্যবহারের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। এ তিন দেশের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় ধূমপান আসক্ত কিশোর-কিশোরীর হার সবচেয়ে বেশি।

২০১৪ সালে পরিচালিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে ‘দ্য গার্ডিয়ানের’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্দোনেশিয়ার ৪০ শতাংশ কিশোর-কিশোরীরা ধূমপান বা তামাকজাতীয় পণ্যে আসক্ত। এর মধ্যে ৩৬ শতাংশ কিশোর এবং ৪ শতাংশ কিশোরী। অপরদিকে ভারতে ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ কিশোর-কিশোরী ধূমপান বা তামাকজনিত পণ্যে আসক্ত। ডব্লিউএইচওর জরিপে ‘সুস্পষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে কিশোর-কিশোরীরা ধূমপানের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে’। এ দিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিগারেটের বিক্রির প্রচারণার কাজে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বহুজাতিক টোব্যাকো কোম্পানিগুলো স্কুল শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করছে। বিশেষ করে মধ্য ও স্বল্প আয়ের দেশগুলোর শিশু-কিশোরদের অর্থের বিনিময়ে সিগারেটের বিজ্ঞাপন প্রচারের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব কোম্পানি নিজ নিজ ব্র্যান্ডের সিগারেটের প্রচার চালাতে প্রতিদিনের হাজিরার ভিত্তিতে স্কুল শিক্ষার্থীদেরও ব্যবহার করছে।

ওই একই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শিশু-কিশোরদের তামাকমুক্ত করতে বিশ্বব্যাপী নতুন প্রচারণা শুরু হয়েছে। পৃথিবীর ২২টি দেশে একসঙ্গে এ তামাকবিরোধী প্রচারের কাজ চলছে। ধূমপানবিরোধী নতুন প্রচারণায় তামাকবিরোধী সংগঠন ও বেসরকারি সংস্থাগুলো সচেতন নাগরিকদের তামাকবিরোধী প্রচারণায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি ধূমপান প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে।

ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রিকিডস (সিটিএফটি), গ্রান্টস ম্যানেজার মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘গবেষণার এ ফলাফলকে আমলে নিয়ে সরকার তামাক কোম্পানির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা নিষিদ্ধের বিধান কঠোরভাবে বাস্তবায়ন না করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা-২০৪০ সাল নাগাদ তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না।’ তিনি বলেন, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি কর্তৃক ঢাকার ১১০টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ওপর পরিচালিত গবেষণায় বিদ্যালয়ের ১০০ মিটারের মধ্যে ৫৯১টি তামাক পণ্যের খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র পাওয়া গেছে। যার অর্ধেকই বিদ্যালয়ের গেট থেকে সরাসরি দৃষ্টিগোচর হয়। এসব বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক কোম্পানিগুলো আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তথা শিশুদের টার্গেট করে তামাক পণ্যের প্রচারণা চালাচ্ছে।