আওয়ামী লীগে কোন্দল, বিএনপির ভয় জামায়াত

রফিকুল ইসলাম, সাবিরা নাজমুল
রফিকুল ইসলাম, সাবিরা নাজমুল

ঝিকরগাছা ও চৌগাছা নিয়ে যশোর-২ আসন। দুই উপজেলাতেই আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব-সংঘাত তীব্র। আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীক চান, এমন ব্যক্তির সংখ্যা অর্ধ ডজনের বেশি। তাঁদের অন্তত তিনজন প্রভাবশালী নেতা।

বিএনপিও খুব একটা স্বস্তিতে নেই। দলটির বড় মাথাব্যথা দলীয় কোন্দল নয়, বরং জোটের শরিক জামায়াত। কারণ, ভোটের হিসাবে দুটি দলই সমানে সমান। জোটবদ্ধ দুটি নির্বাচনেই আসনটি জামায়াতের ভাগে গেছে। আগামী নির্বাচনেও জামায়াত চায়।

যশোর-২ আসনের বর্তমান সাংসদ মো. মনিরুল ইসলাম। তিনি যশোর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। এবার তাঁর পক্ষে ‘নৌকার টিকিট’ পাওয়া খুব সহজ হবে না বলে মনে করছেন দলের লোকজন।

আওয়ামী লীগে ঘরের কোন্দল

২০১৪ সালের ‘একতরফা’ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান মনিরুল ইসলাম। সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. রফিকুল ইসলামও মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। বঞ্চিত হওয়ায় বিদ্রোহ দেখান। সেই থেকে ঝিকরগাছা ও চৌগাছায় আওয়ামী লীগে বিভক্তি।

২০১৪ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে যথাক্রমে চৌগাছা ও ঝিকরগাছা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। ইতিমধ্যে দুটি কমিটিরই মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। পদ-পদবি না পাওয়া তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের হতাশা দলীয় কোন্দলে আরও ঘি ঢেলেছে। দুটি উপজেলাতেই দলের ভেতরে সাংসদবিরোধী পক্ষ গড়ে উঠেছে। ঝিকরগাছায় এর নেতৃত্বে আছেন আরেক মনিরুল ইসলাম। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। চৌগাছায় সাংসদবিরোধী অংশের নেতৃত্বে আছেন এস এম হাবিবুর রহমান। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

দলীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, উভয় উপজেলাতেই এখন আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব-সংঘাত তীব্র। বর্তমান সাংসদ মনিরুলসহ ক্ষমতাসীন দলটির একাধিক প্রভাবশালী নেতা এখানে প্রার্থী হতে চাইছেন। ঝিকরগাছায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুসা মাহমুদ এবং চৌগাছায় পৌরসভার মেয়র নুর উদ্দীন সাংসদের পক্ষে আছেন।

সাংসদ মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আগের এমপিরা ঢাকায় পড়ে থাকতেন। লোকজন তীর্থের কাকের মতো তাঁদের এলাকায় ফেরার অপেক্ষায় থাকত। আর এখন লোকজন বলে, এমপি সাহেব কখন ঢাকায় যাবেন। জনগণ আমাকে সব সময় পাশে পাচ্ছে।’

মনিরুল ইসলাম, এএসএম শাহাদাৎ হুসাইন
মনিরুল ইসলাম, এএসএম শাহাদাৎ হুসাইন

এ আসনে ‘নৌকা’ প্রতীক পেতে সক্রিয়ভাবে মাঠে আছেন আওয়ামী লীগের আরও দুই প্রভাবশালী নেতা। তাঁদের একজন রফিকুল ইসলাম। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ’৯১ ও ’৯৬ সালের নির্বাচনে জেতেন তিনি। একবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং আরেকবার হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হন রফিকুল।

রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে দেখা করে কুশল বিনিময় করে এসেছি। এখন পুরোদমে নির্বাচনী মাঠ গোছাতে শুরু করেছি।’

এর বাইরে আরেক প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব.) মো. নাসির উদ্দীন। তিনি আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা মহাজোটের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চৌগাছা ও ঝিকরগাছায় আওয়ামী লীগে চরম অস্থিরতা চলছে। দলীয় কোন্দলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা হতাশ। তিনি নেতা-কর্মীদের কাছে গিয়ে তাঁদের স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা করছেন। জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করছেন।

মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় আছেন আরও অন্তত পাঁচজন। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কৃষিবিষয়ক সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আলী রায়হান ও কার্যনির্বাহী সদস্য এ বি এম আহসানুল হক, চৌগাছা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম হাবিবুর এবং শিক্ষক হারুন-অর-রশীদ।

বিএনপি না জামায়াত?

২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটবদ্ধ ছিল। এখানে প্রার্থী হন জামায়াত নেতা আবু সাঈদ মো. শাহাদাৎ হুসাইন। তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হন। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোস্তফা ফারুক মোহম্মদের (প্রয়াত) কাছে হেরে যান।

এবার সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য সাবিরা নাজমুল। সম্প্রতি নাশকতা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এখন তিনি কারাগারে। গ্রেপ্তারের আগে তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, এবার এ আসনে তাঁরা জোটের অন্য দলের প্রার্থী দেখতে চান না।

‘ধানের শীষ’ প্রতীক পেতে এখানে আরও তিনজন প্রস্তুত। জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান ও চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি জহুরুল ইসলাম এবং এখানে দুবার ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে ভোট করা মো. ইসহাক। ইসহাক বর্তমানে যশোর জেলা বিএনপির সহসভাপতি। ’৯৬ সালের নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ওই নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী আবু সাঈদের চেয়ে তিনি ১০ হাজার ভোট বেশি পান। তাই এবার তিনিই বিএনপির প্রার্থী হবেন। তখন আওয়ামী লীগের রফিকুল ইসলাম ৮৬ হাজার ৭৫২ ভোট পেয়ে সাংসদ হয়েছিলেন।

’৯১ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের রফিকুল ইসলাম জয়ী হন (৬২ হাজার ৩৭৩ ভোট)। তবে সেবার দ্বিতীয় হয়েছিলেন জামায়াতের মকবুল হোসেন। তিনি পান ৪৬ হাজার ৮৫৪ ভোট। বিএনপির প্রার্থী ইসহাক পেয়েছিলেন ৪০ হাজার ৮৫৪ ভোট।

এসব পরিসংখ্যান বলছে, যশোর-২ আসনে বিএনপি ও জামায়াতের ভোট প্রায় কাছাকাছি। আসনটি এবারও ভাগে পেতে তৎপর জামায়াত। সম্ভাব্য প্রার্থী জামায়াত নেতা আবু সাঈদ। তিনি দলটির যশোর জেলা কমিটির নায়েবে আমির। নাশকতার মামলায় এখন কারাগারে।

বিএনপির নেতারা বলছেন, এবার এ আসনে জামায়াতকে ছাড় দিতে রাজি নয় বিএনপি।