বিস্ফোরণে দগ্ধ শাহীন মিয়ার মৃত্যু

শাহীন মিয়া। ছবি: সংগৃহীত
শাহীন মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ভালুকায় বিস্ফোরণে দগ্ধ শাহীন মিয়া (২৪) মারা গেছেন। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহীনের মৃত্যু হয়। হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) বাচ্চু মিয়া প্রথম আলোকে এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিট সূত্র জানায়, শাহীনের শরীরের ৮৩ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। তাঁর শ্বাসনালিও পুড়েছে। তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছিল।

তুষার মাহমুদ নামে শাহীনের এক বন্ধু জানান, আজ বৃহস্পতিবার শাহীনের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে।

শাহীন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জের শাহবাজপুর উপজেলায়। বাবা মারা গেছেন তিন বছর আগে। মা শাফিয়া বেগম জানিয়েছিলেন, তাঁর দুই ছেলে, দুই মেয়ে। গ্রামের বাড়িতে এক ছেলে বাবার দোকান সামলান। পরিবারটি তাকিয়ে ছিল শাহীনের দিকে।

গত শনিবার রাতে ভালুকার মাস্টারবাড়ি এলাকায় একটি ছয়তলা ভবনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই তৌহিদুল ইসলাম (২৩) নামের একজন মারা যান। গুরুতর দগ্ধ হন দীপ্ত সরকার (২৩), শাহীন মিয়া (২৪) ও হাফিজুর রহমান।

শিক্ষাজীবন শেষে কর্মজীবনে ঢোকার আগে হাতে-কলমে শিক্ষা নিতে কুয়েটের বস্ত্র প্রকৌশল বিভাগের এই চার ছাত্র ভালুকার স্কয়ার ফ্যাশন লিমিটেড নামের কারখানায় শিক্ষানবিশ (ইন্টার্ন) প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। কারখানার পাশে মাস্টারবাড়ি এলাকায় তাঁরা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন।

স্কয়ার ফ্যাশন লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম জানান, ওই চার শিক্ষার্থী ১১ মার্চ থেকে ইন্টার্নি শুরু করেন, যা আগামী ৫ এপ্রিল শেষ হওয়ার কথা।

বিস্ফোরণের পর দীপ্ত, শাহীন ও হাফিজুরকে গত রোববার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।

ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শংকর পাল জানিয়েছেন, হাফিজুরের ৫৪ ও দীপ্তের শরীরের ৫৮ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তাঁদের শ্বাসনালিও দগ্ধ হয়েছে। তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ঘটনার পর পুলিশ জানায়, মাস্টারবাড়ি এলাকার বাড়িটির মালিক অবৈধভাবে গ্যাস-সংযোগ নিয়েছিলেন। সেই সংযোগের ফুটো থেকে গ্যাস ছড়িয়ে বিস্ফোরণ ঘটেছে। ভবনমালিকের অবহেলায় (দণ্ডবিধির ৩০৪-ক ধারা) হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছে ভালুকা থানার পুলিশ।

বিস্ফোরণের পর রোববার সন্ধ্যায় ছয়তলা ওই ভবনের মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেয় পুলিশ। ভবনের অন্য ভাড়াটেরা আগেই ভবন ছেড়েছেন।