প্রিয় আরও কিছুদিন বাঁচতে চায়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ক্যানটিনে কাজ করতেন ছেলেটি। ধোয়ামোছার কাজ করতেন আর চা এনে দিতেন। যা টাকা পেতেন, তাতে তিনবেলা চলে যেত। তিনি থাকতেন চারুকলার ক্যানটিনেই। হঠাৎ অসুস্থ হতে থাকেন তিনি। হাত-পা শুকিয়ে কঙ্কাল হয়ে যায়। চিকিৎসকের কাছে গিয়ে শোনেন, তিনি বিরল এক রোগে আক্রান্ত।
ছেলেটির নাম জাহিদুল ইসলাম প্রিয়। বয়স প্রায় ২৪। কুমিল্লার লাকসামে তাঁর গ্রামের বাড়ি। তবে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় তাঁর কেউ নেই। মা-বাবা বা কোনো আত্মীয়স্বজন খোঁজ নেয় না তাঁর।
প্রিয় এখন ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মানবিকতার খাতিরে তাঁর কাছ থেকে কোনো টাকা নেয় না। বিছানা থেকে সে উঠতে পারে না। হাসপাতালের ক্যানটিনের খাবার খেয়ে বেঁচে আছে সে।
গত রোববার বিকেলে প্রিয় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি খুবই শুকনা হয়ে গেছি। ভাত ছাড়া কিছু খাইতে পারি না। তয় ভালো খাওন খাইতে মন চায়। আমার স্বপ্ন একটাই আমি আরও কিছুদিন বাঁচতে চাই।’
প্রিয় ছোটবেলা থেকেই হালকা–পাতলা ধরনের। অসুস্থতা লেগেই থাকত। গত বছরের জুনে তিনি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক পরীক্ষায় ধরা পড়ে তিনি লিম্ব-গার্ডেল মাসকুলার ডিসট্রোফিতে আক্রান্ত। এই রোগের পরিণতি ধীরে ধীরে মৃত্যু। পুরোপুরি সুস্থ হতে এর কোনো চিকিৎসা নেই।
তাঁর রোগের বিষয়ে গণস্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক নাসিমা ইয়াসমিন প্রথম আলোকে বলেন, এই রোগে রোগীর হাত পা ক্রমেই শুকিয়ে যায়, দুর্বলতা কাজ করে। রোগীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাজ করে না, পুষ্টি পায় না। প্রিয়র ব্যাপারে তিনি বলেন, নিয়মিত ব্যায়াম, ফিজিওথেরাপি ও ভালো মানের খাওয়াদাওয়া পেলে ছেলেটি আরও কয়েক বছর বেঁচে থাকার সুযোগ পাবে। তবে ভালো খাবার কেনার অবস্থা তো তাঁর নেই। গত বছর থেকে তিনি হাসপাতালে আছেন, তবে আত্মীয়রা কেউ খোঁজ নেন না।
গত জুন থেকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় প্রিয়র। হাড়ের ওপরে শুধু চামড়াটা দেখা যায়। শরীর শুকিয়ে পাতলা হয়ে যায়। তিনি কোনো কাজ করতে পারেন না। তাঁর হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুস ঠিকমতো কাজ করে না। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা, মুহসীন হলের শিক্ষার্থীরা তাঁকে কিছু অর্থ দিয়ে সহায়তা করেন। নিজের জমানো কিছু অর্থ শেষ হয়ে যায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে।
প্রিয়র ব্যাপারে চারুকলা অনুষদের সাবেক শিক্ষার্থী মো. মোরসালিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসে থাকতেই ছেলেটি অসুস্থ হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী ও চারুকলার কিছু শিক্ষার্থীর সাহায্যে ছেলেটা বেঁচে আছে। তবে তার ভালো খাওয়াদাওয়া দরকার, যেটা হয় না। বিছানা থেকেও সে উঠতে পারে না, যে কাজ করে খাবে। ফিজিওথেরাপির জন্য টাকাপয়সা প্রয়োজন। আর ভালো মানের খাওয়াদাওয়া করা প্রয়োজন।’
প্রিয়র কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা বিকাশ অ্যাকাউন্টও নেই। তবে কেউ যদি তাঁকে সহায়তা করতে চান, তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে পারবেন-০১৭৫৬১৮৮০১৪।