খালেকের না, আ.লীগে প্রার্থীজট

খুলনা সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এখনো প্রার্থী ঠিক করেনি। তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। অন্য কয়েকটি দলের মেয়র প্রার্থীও ঠিক হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁদের।

গত ৩ মার্চ খুলনায় অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী মেয়র পদে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবেন, এমন প্রত্যাশা ছিল স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে। কিন্তু তা হয়নি। গত ২৯ মার্চ ঢাকায় দলের নীতিনির্ধারণী সভায়ও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি দল। এরপর গত সোমবার রাতে খুলনায় দলীয় কার্যালয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভা ডাকে। কোন কোন নেতা মেয়র পদে প্রার্থী হতে আগ্রহী, তা জানতেই মূলত এ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় বাগেরহাট-৩ আসনের সাংসদ তালুকদার আবদুল খালেককে মেয়র পদে মনোনয়নের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে সুপারিশ করে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ। সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের তিনজন নেতা জানান, সভার শুরুতেই নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র আবদুল খালেকের নাম প্রস্তাব করেন নেতারা। এ সময় মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্যরা তাঁর প্রতি সমর্থন জানান। তবে তিনি প্রার্থী না হলে অন্য নেতারা কেন্দ্রের কাছে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান।

তবে তালুকদার খালেক সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, তিনি একজন সংসদ সদস্য। তিনি সিটি নির্বাচন করতে চান না। নতুনদের সুযোগ করে দিতে চান।

ওই সভায় শেখ পরিবারের দুই সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন ও শেখ সোহেলের নাম প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আসে। খুলনা শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি কাজী আমিনুল ইসলাম, খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, নগর যুবলীগের আহ্বায়ক সরদার আনিসুর রহমান, বিজেএ সভাপতি ও দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ সৈয়দ আলী, সাবেক সাংসদ ও পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান এনায়েত আলীর নামও প্রস্তাব করা হয়।

নগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মুন্সী মাহবুব আলম প্রথম আলোকে বলেন, বর্ধিত সভায় মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে চার-পাঁচজনের নাম এসেছে। আর সর্বসম্মতিক্রমে এসেছে তালুকদার খালেকের নাম।
খুলনা বিএনপির বড় ঘাঁটি। গত নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী তালুকদার খালেক অর্ধলক্ষাধিক ভোটে বর্তমান মেয়র বিএনপির নেতা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের কাছে হেরে যান। খালেকের পরাজয়ের কারণ ছিল দলীয় কোন্দল। নগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব ছিল। কিন্তু এবার কোন্দল সামলে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করে আনতে তৃণমূলের নেতারা খালেকের পাশে দাঁড়াতে চান।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রার্থী তালুকদার খালেক হলে তাঁদের আপত্তি নেই। কিন্তু খালেক নির্বাচনে না এলে তাঁরা নিজেদেরকে শক্ত প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রের কাছে দাঁড় করাতে মরিয়া। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে চারজনের নাম বেশ জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। তাঁরা হলেন প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই শেখ সালাহউদ্দীন। বাগেরহাট-১ আসনের সাংসদ শেখ হেলালের ছোট ভাই তিনি। আওয়ামী লীগে তাঁর কোনো আনুষ্ঠানিক পদে নেই। তবে তিনি খুলনা বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি এবং মধুমতি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান। আলোচনায় আছেন সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, নগর যুবলীগের আহ্বায়ক সরদার আনিসুর রহমান এবং বিজেএ সভাপতি ও দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ সৈয়দ আলী।
সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অনেক দিন ধরে তিনি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তালুকদার খালেক নির্বাচন না করলে তিনি প্রার্থী হতে আগ্রহী। সরদার আনিসুর রহমানও প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘খালেক ভাই না দাঁড়ালে আমাকে প্রার্থী করা হবে বলে মনে করছি।’ শেখ সৈয়দ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক মাস আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়ে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছি। সোমবার দলীয় সভায় নিজের আগ্রহের কথা জানিয়েছি। দল আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে আশা করছি।’

বিএনপির মনোনয়ন চান দুজন
বিএনপি সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে বলে ঠিক করেছে। বিএনপি থেকে বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের পাশাপাশি জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলমও আগ্রহী। বর্তমান মেয়রের পাশাপাশি তিনিও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সিটি নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও নগর বিএনপির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আজ খুলনা বিএনপির সভায় আগ্রহী প্রার্থীদের তালিকা করে কেন্দ্রে পাঠানো হবে। কেন্দ্রই প্রার্থী নির্বাচন করবে।
বর্তমান মেয়র ও নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু আমি মেয়র হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি, আমি মনোনয়ন চাইব। মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আমি আশাবাদী।’ আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী শফিকুল আলম বলেন, দীর্ঘদিন তিনি সিটি করপোরেশনের কমিশনার ছিলেন। এবার মেয়র পদে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।