ব্যবসায়িক স্বার্থে অর্ঘ্য উদ্যান ধ্বংসের প্রচেষ্টা!

দৃষ্টিনন্দন অর্ঘ্য সড়কদ্বীপটি ভেঙে ফেলার প্রস্তুতির প্রতিবাদে শনিবার নাগরিক সমাবেশ করা হয়। সমাবেশে বক্তব্য দেন লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ। ছবি: মুসা আহমেদ
দৃষ্টিনন্দন অর্ঘ্য সড়কদ্বীপটি ভেঙে ফেলার প্রস্তুতির প্রতিবাদে শনিবার নাগরিক সমাবেশ করা হয়। সমাবেশে বক্তব্য দেন লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ। ছবি: মুসা আহমেদ

মিরপুর রোড ও গ্রিন রোডের সংযোগস্থল সায়েন্স ল্যাবরেটরির অর্ঘ্য সড়কদ্বীপটি ব্যবসায়িক স্বার্থে ভেঙে ফেলার প্রস্তুতির প্রতিবাদে নাগরিক সমাবেশ করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশবিদ ও বিশিষ্টজনেরা। শনিবার সকালে অর্ঘ্যের সামনে এই সমাবেশ করা হয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), ব্লু প্ল্যানেট ইনিশিয়েটিভ, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, গ্রিন ভয়েস এবং সচেতন নাগরিক সমাজ এই সমাবেশের আয়োজন করে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি ‘সবুজ সড়কদ্বীপগুলো ধূলিসাৎ করা হচ্ছে’ এই শিরোনামে প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন ছাপানো হয়। এরপর সড়কদ্বীপগুলো রক্ষায় বিবৃতি দিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশবিদেরা। এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনকে স্মারকলিপি দিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিশিষ্টজনেরা।

শনিবার সমাবেশে লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি হিসেবে একজন মেয়রের কথায় কাজে মিল থাকা উচিত। একদিকে সবুজায়নের কথা বলবেন, অন্যদিকে বিদ্যমান সবুজ বা সৌন্দর্য হরণ করবেন, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাই এই উন্নয়ন ব্যবসার জন্য করছে কি না, সেটা প্রশ্ন রাখে। এ ছাড়া যে সরকারি সংস্থা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে অর্ঘ্যের মতো একটি উদ্যানের জায়গা বরাদ্দ দেয়, তাদের কাছ থেকে নগরের ভালো কিছু আসা করা যায় না।’ তিনি আরও বলেন, অর্ঘ্যের জায়গাটি বরাদ্দ পেয়েছে বিআরবি ক্যাবল। কোটি টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তারা এখানে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন তৈরি করবে। তাই যেকোনো মূল্যে সবুজ সুদৃশ্য অর্ঘ্যটিকে রক্ষায় তাদের এই অপতৎপরতা বন্ধ বা আটকাতে হবে। অন্যথায় রমনাসহ ঢাকার অন্য পার্কগুলো বিনষ্ট হলেও কিছুই করার থাকবে না।

নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘আমরা চাই এই সড়কদ্বীপটি ধ্বংস না করে নগরের সৌন্দর্য ও প্রকৃতির প্রয়োজনে এ ধরনের আরও পরিকল্পিত সড়কদ্বীপ তৈরি করা হোক।’ তিনি বলেন, ‘বিআরবি ক্যাবল নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে এই ধরনের পরিবেশ বিনষ্টকারী কার্যক্রমে লিপ্ত হয়েছে। দেশের সচেতন নগরবাসীকে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের আহ্বানে তারা সাড়া না দিলে প্রয়োজনে তাদের পণ্য আমরা বর্জন করব।’

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশিদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে লক্ষ্য করছি, উন্নয়ন মানেই প্রকৃতিকে ধ্বংস করার একটা অপচেষ্টা। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা আশা করি “অর্ঘ্য” সড়কদ্বীপটিকে রক্ষা করে ডিএসসিসির মেয়র ঢাকাকে সবুজায়নে তাঁর যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তা বাস্তবায়ন করবেন।’

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘ছোট এই জায়গাটিতে অসংখ্য প্রজাপ্রতি, ছোট ছোট প্রাণীসহ এবং এটিকে যেভাবে পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে, তা খুবই দৃষ্টিনন্দন। এটিকে ধ্বংসের চক্রান্ত আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না।’

বাপার সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন বলেন, ডিএসসিসির ‘জল-সবুজে ঢাকা’ প্রকল্প মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছিল। তার বিপরীতে অর্ঘ্য বিনষ্টের এই পরিকল্পনায় বেশ বেমানান। এসব স্থান ব্যবসায়ীদের দিয়ে দেওয়ার জন্য নাগরিকেরা মেয়রকে ভোট দেননি। অর্ঘ্যটি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
অর্ঘ্যের তত্ত্বাবধানকারী হেরিটেজ ক্রিয়েটিভ কাউন্সিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাফেয়া আবেদীন বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই জায়গাটি বরাদ্দ নিয়ে নিজ অর্থায়নে প্রকৃতি-পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যবান্ধব এই অর্ঘ্য তৈরি করেছেন তিনি। অথচ বরাদ্দ বাতিলের নোটিশ না দিয়েই বিআরবিকে জায়গাটি বরাদ্দ দিয়েছে ডিএসসিসি। তারা উন্নয়নের নামে এই অর্ঘ্যকে ধ্বংস ও বাণিজ্যিক ভবন করতে মরিয়া হয়ে আছে। অথচ এখানে অনেক পাখির অভয়ারণ্য, রয়েছে ছোট ছোট অনেক প্রাণী এবং তাদের জন্য রয়েছে পানি ও খাবার। তিনি আরও বলেন, ‘এই ছোট্ট সড়কদ্বীপটি এখন সবুজ মনোহর গাছ ও অজস্র রং-বেরঙের ফুল ও ফাঁকে ফাঁকে ছোট বড় প্রাণী ও পাখির স্থাপত্যসমৃদ্ধ মনোরম একটি সড়কদ্বীপ। এই কাজটি শুধু আমার নিজের প্রয়োজনে করিনি, এটা নগরের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য নগরবাসীর জন্যই করা হয়েছে।’ তাই এটি যাতে রক্ষা পায়, এ জন্য তিনি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

আবদুল মতিনের সভাপতিত্বে বাপার যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, গ্রিন ভয়েসের সহসমন্বয়ক হুমায়ন কবির, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন, নিরাপদ ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।