মন্ত্রীর নির্দেশের পরও থামছে না চাঁদাবাজি!

রাজধানী সুপার মার্কেটে চাঁদাবাজি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়নে পুলিশ কোনো গরজ দেখাচ্ছে না বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।

বিপণিবিতানটির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা ময়নুল হক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিপণিবিতানটিতে ১ হাজার ৭৮৮টি দোকান আছে। বিভিন্ন অজুহাতে এসব দোকানের পাশাপাশি মার্কেটের প্রবেশপথ ও ফুটপাতে অবৈধ দোকান বসিয়ে সেগুলো থেকে চাঁদা আদায় করছেন ময়নুল হকের লোকেরা। ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করলে তাঁদের প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি। সর্বশেষ গত ২৯ মার্চ বিপণিবিতানটির ব্যবসায়ীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ওয়ারী বিভাগে ফোন করে চাঁদাবাজি বন্ধে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন।

আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা আমার কাছে এসে মৌখিকভাবে সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন। পরে আমি সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশকে ফোন করে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই নির্দেশের ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। এখনো চলছে চাঁদাবাজি। ব্যবসায়ীরা ওয়ারী থানায় আওয়ামী লীগ নেতা ময়নুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে তা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে গ্রহণ করেছে।

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, ওই মার্কেটের প্রবেশপথ ও ফুটপাতে অবৈধ ছোট ছোট দেড় শতাধিক টেবিল বা চৌকিতে পসরা সাজিয়ে বসে আছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। সেখানে কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা। এতে বাইরে থেকে মার্কেটটির পরিবেশ নোংরা দেখাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, এসব দোকান থেকে দিনে গড়ে ৪০০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। অন্যথায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সেখানে বসতে দেওয়া হয় না। বিষয়টি পুলিশ জানলেও অজ্ঞাত কারণে তারা নীরব ভূমিকা পালন করছে। তাঁরা বলেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, পুলিশ কোনো ব্যবস্থা তো নেয়নি, বরং জিডির পর থেকে প্রতিনিয়ত ব্যবসায়ীদের হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছেন চাঁদাবাজেরা।

জানতে চাইলে পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার ফরিদ উদ্দিন আহমেদ গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই বিপণিবিতানের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভাপতির কিছু সমস্যা আছে। আমরা বিপণিবিতানে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আগামী মাসে বিপণিবিতানের ব্যবসায়ীদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই কমিটির মাধ্যমে সবাই গ্রহণযোগ্য একজন নেতা পাবেন বলে প্রত্যাশা করছি। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে পুলিশ।’

রাজধানী সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই বিপণিবিতানটিতে বিদ্যুৎবিভ্রাট নেই বললেই চলে। কিন্তু এ সময়ে জেনারেটরের তেল ও সার্ভিস চার্জ বাবদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা আদায় করেছেন ময়নুল হক। ব্যবসায়ীরা টাকা দিতে বাধ্য। না হলে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। একইভাবে বিদ্যুৎ বিল বাবদ ছয় বছরে প্রায় ৩ কোটি, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ বাবদ ১ কোটি ৩০ লাখ, বিদ্যুতের লোড বাড়ানো বাবদ ১৪ লাখসহ বিভিন্ন খাতে প্রায় ৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি ময়নুল। এ ছাড়া মার্কেটের চারপাশে শতাধিক অবৈধ দোকানপাট বসিয়ে প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা চাঁদা তোলে ময়নুলের লোকজন।

চাঁদাবাজির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ময়নুল হক বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট। বিষয়টি থানা-পুলিশ,
র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) একাধিকবার তদন্ত করেছে। তারা কোনো প্রমাণ পায়নি। মার্কেটের ব্যবসায়ীদের একটি গোষ্ঠী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।