কামরাঙ্গীরচরে রাত জেগে রান্না

কামরাঙ্গীরচরে গ্যাসের সংকট বেশ কয়েক বছর ধরেই। তবে সম্প্রতি তা প্রকট হয়েছে। সারা দিন গ্যাস থাকে না। আসে গভীর রাতে। আবার ভোর না হতেই চলে যায়। তাই রাত জেগেই নারীদের রান্না করতে হয়। দিনের বেলা ভরসা মাটির চুলা কিংবা সিলিন্ডার গ্যাস।

বাসিন্দারা জানালেন, গত কয়েক বছরে নতুন সংযোগ না দেওয়ায় অবৈধভাবে অনেক সংযোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এলাকায় অনেক কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে অবৈধ সংযোগের ছড়াছড়ি। ফলে বৈধ সংযোগে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ নেই।

গত শুক্রবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৫,৫৬ এবং ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে এ সমস্যার কথা জানা গেছে। বাসিন্দারা বলছেন, নিম্ন আয়ের মানুষ ওই এলাকায় থাকেন। কারণ, বাসা ভাড়া অন্য অনেক এলাকার তুলনায় কম। কিন্তু এখন রান্নার জন্য বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে অনেক বাসিন্দাকে। তা না হলে সারা দিন ঠান্ডা এবং বাসি খাবার খেতে হয়। শিশুদের খাবার তৈরিতে অসুবিধা সবচেয়ে বেশি।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, ১৯৯৭ সালে কামরাঙ্গীরচরে গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়। তখনকার তুলনায় লোকবসতি বেড়েছে কয়েক গুণ। বেড়েছে কলকারখানার সংখ্যাও। তবে বাড়তি চাহিদার সঙ্গে খাপ খাইয়ে গ্যাস সরবরাহের আধুনিক লাইন স্থাপন করা হয়নি। তবে অবৈধ গ্যাসের সংযোগ ঘাটতির প্রধান কারণ। কামরাঙ্গীরচরের তিন ওয়ার্ডে প্রায় ১৩ লাখ মানুষের বসবাস। অধিকাংশ বাসিন্দাই গ্যাস-সংকটে ভুগছেন।

মমতাজ বেগম এবং তাঁর স্বামী দুজনই ইসলামবাগে জুতার কারখানায় কাজ করেন। থাকেন কামরাঙ্গীরচরের আচারওয়ালা ঘাট এলাকায়। মাস শেষে দুজনের আয় সাড়ে ১০ হাজার টাকা। সাড়ে ৩ হাজার টাকায় এক কক্ষ নিয়ে ভাড়া থাকেন। গ্যাসের সমস্যায় লাকড়ি দিয়ে রান্না করতে হয় প্রতিদিনই। মাসে বাড়তি খরচ হয় হাজারখানেক টাকা।

আশ্রাফাবাদের কুলসুম বেগমের পরিবারে লোকসংখ্যা বেশি, স্বামীর আয় কম। তাই রান্নায় বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ তাঁর নেই। রাত দুইটার দিকে তিনি রান্না শুরু করেন। শেষ করে ঘুমাতে যেতে আজান শোনা যায়। মাতবর বাজারের বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘গ্যাসের লাইন বোঝা। সারা দিন কোনো গ্যাস থাকে না। অথচ গ্যাসের বিল দেওয়া লাগে।’

৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘এ সমস্যার সমাধানে তিতাস, বিদ্যুৎমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবার কাছে গিয়েছি। কিন্তু সমাধানের বিষয়ে কেউ আশ্বস্ত করতে পারেননি।’ তিনি আরও বলেন, তিতাসের উচিত অত্র এলাকায় কম মূল্যের সিলিন্ডার গ্যাস সরবরাহ। তবে ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন বলেন, অবৈধ কারখানা উচ্ছেদ এবং অবৈধ লাইন বন্ধের মাধ্যমে সমস্যা কিছুটা কমে আসতে পারে।

বাসিন্দারা বলেন, এই এলাকায় হাজার হাজার কারখানা। যেগুলোর বৈধ সংযোগ নেই। তাঁরা প্রভাবশালী। তাঁদের কারণে বৈধ গ্রাহকেরা গ্যাস পান না। শুক্রবার কারখানা বন্ধ থাকে বলে গ্যাসের সমস্যা তুলনামূলক কম থাকে।
তিতাসের মেট্রো ঢাকা বিপণন ডিভিশনের (উত্তর) মহাব্যবস্থাপক রানা আকবর হায়দারী বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকার কারণে অন্যান্য এলাকার মতো কামরাঙ্গীরচরেও গ্যাসের সমস্যা। তবে সেখানে অবৈধ সংযোগের সংখ্যা অনেক বেশি যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। কারণ হিসেবে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরের দিন আবার কারখানাগুলো সংযোগ নেন।