কোটা সংস্কার আন্দোলনের ৩ জনকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ, পুলিশ বলছে ডাকা হয়েছে

সংবাদ সম্মেলনে (বাঁ থেকে) রাশেদ খান, নুরুল্লাহ নূর, হাসান আল মামুন ও ফারুক হোসেন। ছবি: মোছাব্বের হোসেন
সংবাদ সম্মেলনে (বাঁ থেকে) রাশেদ খান, নুরুল্লাহ নূর, হাসান আল মামুন ও ফারুক হোসেন। ছবি: মোছাব্বের হোসেন

কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন নেতাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই তিনজন কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক। অবশ্য পুলিশ বলছে, তাঁদের তুলে নেওয়া হয়নি, বরং আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছিল।

প্রায় দুই ঘণ্টা পর এই তিনজনকে পুলিশ ছেড়ে দেয়।

আন্দোলনকারী সংগঠনের ওই তিন যুগ্ম আহ্বায়ক হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র নুরুল্লাহ নূর, এমবিএর (ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগ) ছাত্র রাশেদ খান এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ফারুক হোসেন। আজ বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আগামী দুই দিনের মধ্যে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। ওই সংবাদ সম্মেলনে ওই তিনজনই উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে রাশেদ খান বক্তব্যে তাঁকে জামায়াত–শিবিরকর্মী হিসেবে একটি দৈনিক পত্রিকায় করা প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানান।

আজ সোমবার সকালে সংবাদ সম্মেলনের ঘণ্টা খানেক পর ওই তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে রিকশা থেকে নামিয়ে একটি বড় মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রত্যক্ষদর্শী আরেক নেতা ও এক দোকান কর্মচারী। পরে যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানও বলেন, তাঁদের তুলে নেওয়া হয়।

যদিও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, তিনজনকে তুলে নেওয়া হয়নি। তাঁদের আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছে। হয়তো এতক্ষণ চলেও গেছেন।

পরে বেলা পৌনে তিনটায় রাশেদের মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে থেকে তুলে নেওয়া হয়। পরে পৌনে তিনটার দিকে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, তাঁর বাবাকেও থানায় নেওয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী পরিষদের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন ঘটনা সম্পর্কে জানান, সংবাদ সম্মেলন শেষে বেলা পৌনে একটার দিকে তাঁরা কয়েকজন দুপুরের খাবার খেতে রিকশায় করে চানখাঁরপুল যাচ্ছিলেন। রাশেদ, নুরুল্লাহ ও ফারুক এক রিকশায় ছিলেন। আর তিনি ছিলেন পেছনের রিকশায়। ওই তিনজনকে বহনকারী রিকশাটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রবেশের ফটকের কাছে এলে পেছন থেকে তিনটি মোটরসাইকেল রিকশাটির সামনে গিয়ে গতিরোধ করে। পরে পেছন থেকে আরেকটি সাদা রঙের হাইএস মডেলের মাইক্রোবাস এসে সেখানে থামে। গাড়ি থেকে কয়েকজন নেমে রিকশা থেকে তিন নেতাকে নামিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যায়।

একই তথ্য জানালেন আরেক প্রত্যক্ষদর্শী হাসপাতালের ফটকের উল্টো দিকে খাবারের দোকানের কর্মচারী মো. সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, মোটরসাইকেল ও গাড়ি থেকে নেমে সাত-আটজন ওই রিকশার সামনে দাঁড়ায়। তারা তিনজনকে রিকশা থেকে নামাতে গেলে কিছুটা ধস্তাধস্তি হয়। পরে তিনজনের প্রত্যেককে দুপাশ থেকে দুজন করে ধরে গাড়িতে তুলে নিয়ে দ্রুত চলে যায়।

এর আগে সংবাদ সম্মেলন শেষে দুপুর ১২ টার দিকে রাশেদ খান প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা শাহবাগ থানায় যাবেন। তাঁরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। এ ব্যাপারে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করবেন।

তুলে নেওয়ার পর তিনজনের ফোনই বন্ধ পাওয়া যায়।