ইয়াবায় দিন বদল, বাসচালকের সহকারী থেকে কোটিপতি

নুরুল হুদা
নুরুল হুদা
>
  • ঠিকমতো সংসার চালাতে পারতেন না নুরুল হুদা।
  • মাত্র পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
  • জমি কিনেছেন কক্সবাজার শহরে, ফ্ল্যাট কিনেছেন চট্টগ্রামে।
  • ৮ এপ্রিল ইয়াবা বড়িসহ হুদা গ্রেপ্তার হন।

কোটি টাকার মালিক হতে কত দিন লাগে, এ প্রশ্নের উত্তর সম্ভবত সবচেয়ে ভালো জানেন নুরুল হুদা। কক্সবাজারের চকরিয়ার এই যুবক সাত বছর আগেও ছিলেন বাসচালকের সহকারী। যে টাকা বেতন পেতেন, তা দিয়ে ঠিকমতো সংসার চালাতে পারতেন না। আর এখন তাঁর স্ত্রীর গাড়িচালকেরই বেতন ১৪ হাজার টাকা। চট্টগ্রাম শহরের অভিজাত এলাকার যে ফ্ল্যাটে তাঁর পরিবার থাকে, সেটির ভাড়া ৩৫ হাজার টাকা।

গল্পের আলাদিন ইচ্ছাপূরণের জন্য পেয়েছিল ‘চেরাগ’। আর হুদার ভাগ্য বদলে দিয়েছে ইয়াবা ব্যবসা। মাত্র পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। গাড়ি আছে দুটি। বিউটি পারলার খুলে দিয়েছেন স্ত্রীকে। রয়েছে মুঠোফোনের দোকান। জমি কিনেছেন কক্সবাজার শহরে, ফ্ল্যাট কিনেছেন চট্টগ্রামে। ৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম শহরের ২ নম্বর গেট এলাকা থেকে ব্যক্তিগত গাড়িসহ হুদাকে গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তদন্তে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সেদিন হুদার গাড়িতে ১০ হাজার ইয়াবা বড়ি ছিল।

কক্সবাজারের চকরিয়ার খুটাখালী ইউনিয়নের সেগুনবাগিচা গ্রামের মৃত বদিউর রহমানের তিন ছেলের মধে ৵ হুদা সবার বড়। তাঁর বাবা বাসচালক ছিলেন। ৯ এপ্রিল গ্রামের ১০ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলো। তাঁরা বলেন, ২০১০ সাল পর্যন্ত বাসচালকের সহকারী ছিলেন হুদা। হঠাৎ চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। একটা সময় তাঁর চলাফেরা ও পোশাকে পরিবর্তন লক্ষ করেন তাঁরা। গ্রাম ছেড়ে চট্টগ্রাম শহরে চলে যান। সেখান থেকে মাঝেমধ্যে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে গ্রামে আসতেন। বছরখানেক আগে বাড়ির চারপাশে সীমানাপ্রাচীর তুলেছেন। তবে টিনের ঘর এখনো পাকা করেননি।

খুটাখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, হঠাৎ করেই প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন হুদা।

তবে হুদার ছোট ভাই শহিদুল ইসলাম দাবি করেন, তাঁর ভাই ষড়যন্ত্রের শিকার। তাঁদের ছোট ভাই এনামুল হক এখন অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। তাঁর পাঠানো টাকা দিয়ে হুদা চট্টগ্রামে ব্যবসা করছেন এবং কক্সবাজার শহরে জমি কিনেছেন। গাড়ি কিনেছেন স্ত্রীর টাকায়।

এ বিষয়ে সেগুনবাগিচা গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, হুদার ছোট ভাই এনামুল কয়েক বছর আগে সাগরপথে মালয়েশিয়া যান। সেখানে এক-দুই বছর থাকার পর কীভাবে যেন অস্ট্রেলিয়া চলে যান তিনি। হুদার সঙ্গে মালয়েশিয়ায় যাওয়া গ্রামের এক যুবক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির একটি বহুতল ভবনের চারতলার ফ্ল্যাটে থাকে হুদার পরিবার। ৯ এপ্রিল সকালে সেখানে গেলে বাসার প্রহরী আবদুল লতিফ বলেন, চার মাস আগে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন হুদা নামের এক ব্যবসায়ী।

হুদার স্ত্রী আরিফা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, একসময় ইয়াবা ব্যবসা করলেও এখন তাঁর স্বামী এসবের সঙ্গে জড়িত নন। বিউটি পারলার ও মুঠোফোন বিক্রির দোকানের আয় এবং দেবরের পাঠানো টাকা দিয়ে তাঁরা গাড়ি ও জমি কিনেছেন। তাঁর ছেলেমেয়েরা ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে পড়ে।

হুদা এখন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী। এর আগে বিভিন্ন সময়ে দুবার তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। কিছুদিন পরই জামিনে বেরিয়ে যান তিনি। তাঁর অর্থবিত্তের বিষয়টি এত দিন অজানা ছিল।

চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার এস এম মোবাশ্বের হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, হুদার জীবনের কাহিনি সিনেমার মতো। বাসচালকের সহকারী থাকার সময় কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম শহরে ইয়াবা নিয়ে আসতেন (বাহক)। পরে নিজেই ব্যবসা শুরু করেন। ইয়াবাই তাঁকে কোটিপতি করেছে।

এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, হুদার মোবাইলের দোকান ও স্ত্রীর বিউটি পারলার আসলে লোকদেখানো ব্যবসা। দুটি গাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি-সবই করেছেন ইয়াবা বিক্রির টাকায়। হুদা খুবই ধূর্ত প্রকৃতির। ব্যাংক হিসাব দেখে কেউ তাঁকে সন্দেহ করতে পারবে না। তাঁর আরও সম্পদ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এর কোনোটাই নিজের নামে নয়।