বাসের চাপায় আহত ট্রাফিক পরিদর্শক শঙ্কামুক্ত নন

শামীমা লুনা চোখে অন্ধকার দেখছেন। বাসের চাপায় আহত ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক স্বামী দেলোয়ার হোসেনের এক পা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যেই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। ফুসফুসে পানি জমেছে। তাঁর অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাঁর এমন হবে, ভাবতেও পারেননি শামীমা।

রাজধানীতে ঘটনাটি ঘটে ১৬ এপ্রিল। সকালে পলাশী মোড়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন দেলোয়ার। শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক তারিকুল ইসলাম বলছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এস এম) হলের সামনে যানবাহন চলাচল ওই দিন বন্ধ ছিল। সকাল নয়টার কিছু আগে আজিমপুরের দিক থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি বাস (চ ০৮০০৫৩) ওই হলের সামনে দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বাঁ দিকের রাস্তা বন্ধ দেখে বাসটি ডান দিক দিয়ে উল্টো পথে যেতে চাইলে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় পুলিশ বাধা দেয়। পরে ঘুরে যাওয়ার সময় বাসের চাকার নিচে পড়ে দেলোয়ার হোসেনের এক পা।

প্রত্যক্ষদর্শী এস এম হলের সামনের চা-দোকানি আবদুল্লাহ গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের সঙ্গে বাসচালকের বাগ্‌বিতণ্ডা হচ্ছিল। বাসের যাত্রীরা নানাভাবে বাসচালককে উসকাচ্ছিলেন। একসময় বাসচালক পলাশী বাজারের দিকে এমনভাবে মোড় ঘোরেন যে ট্রাফিক পরিদর্শক রাস্তায় পড়ে যান।

দেলোয়ারের স্ত্রী বলেন, তাঁর স্বামীর জুতার ভেতরে থাকা পায়ের সব মাংস ভেদ করে হাড়গোড় বেরিয়ে এসেছিল।

ঘটনাস্থলে বাসটিকে আটকে রাখে পুলিশ। প্রথমে দেলোয়ারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও পরে অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অ্যাপোলো হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁর পা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত দেন। শামীমা লুনা বলেন, এই খবর তাঁর স্বামী সহ্য করতে পারেননি। তিনি এখন স্কয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন। দায়িত্বরত চিকিৎসক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, রোগী এখনো শঙ্কামুক্ত নন। হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত দেলোয়ারের ফুসফুসে পানি জমেছে। পায়ে তীব্র আঘাত।

এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় পুলিশ একটি মামলা করেছে। জানা গেছে, ওই বাসটি ছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের। বোর্ডের পরিচালক মাহবুবে জামিল গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি শোনার পরপরই তাঁরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটির সদস্যরা তাঁকে জানিয়েছেন, কল্যাণ বোর্ডের বাসটির আগে আরও দুটি গাড়ি ওই পথ দিয়ে যায়। তাঁদের গাড়ির চালকও ওই দুটি গাড়ির পেছনে যেতে চাইলে পুলিশ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং একজন সদস্য উঠে এসে গাড়িচালককে মারধর শুরু করেন। চালক গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনা ঘটে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গাড়িচালক কেন উল্টোপথে যেতে চেয়েছিলেন, জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, তাঁরা কখনো উল্টোপথে গাড়ি চালাতে বলেন না। এ ঘটনায় কেউ অপরাধী হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।