বগুড়ায় গানের তালে আনন্দে বোরো ধান কাটছে কৃষক

চলছে ধান কাটার ধুম। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বোরোর ফলন ভালো হয়েছে। রহমাননগর, নন্দীগ্রাম, বগুড়া। ২১ এপ্রিল। ছবি: সোয়েল রানা
চলছে ধান কাটার ধুম। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বোরোর ফলন ভালো হয়েছে। রহমাননগর, নন্দীগ্রাম, বগুড়া। ২১ এপ্রিল। ছবি: সোয়েল রানা

বগুড়ায় মাঠজুড়ে পাকা বোরো ধান। সোনা রং। কেউ কাটছেন, কেউ বাঁধছেন আঁটি। আর এর ফাঁকে চলছে গলা ছেড়ে গান গাওয়া। এমন এক কৃষক সাজু মিয়া। মনের মাধুরী মিশিয়ে গাইছেন গান। গান গাইতে গাইতেই দ্রুতগতিতে তিনি কেটে চলেছেন সোনা রঙের বোরো ধান।

সাজু মিয়ার গাওয়া গানের কলিগুলো এমন—‘এখনো খারাপ কেহ কবার পাইনি। শ্বশুরের সঙ্গে গিয়েছিলাম মহিলা হলে ছবি দেখতে। কত লোক দেখছে বটে, কত লোক দেখছে বটে মাইন করেনি। এখনো খারাপ কেহ কবার পাইনি...।’

মাঠে ধান কাটার ফাঁকে ফাঁকেই চলে সাজু মিয়ার (ডানে) গান। এই কঠিন শ্রমের মধ্যে সাজুর গান অন্যদেরও উদ্দীপনা জোগায়। রহমাননগর, নন্দীগ্রাম, বগুড়া। ২১ এপ্রিল। ছবি: সোয়েল রানা
মাঠে ধান কাটার ফাঁকে ফাঁকেই চলে সাজু মিয়ার (ডানে) গান। এই কঠিন শ্রমের মধ্যে সাজুর গান অন্যদেরও উদ্দীপনা জোগায়। রহমাননগর, নন্দীগ্রাম, বগুড়া। ২১ এপ্রিল। ছবি: সোয়েল রানা

গান আর কাজের ফাঁকেই কথা হচ্ছিল আরেক কৃষক মোতাহার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই বছরের নতুন ধান কাটতেছি। খুব আনন্দ লাগতেছে। বিশ-বাইশ মণ করে ধান হচ্ছে, ফলন আসতেছে। কৃষক খুশিতে আছে। হাসি-আনন্দে থাকবে। আল্লার রহমতে আকাশটা কিলিয়ার (পরিষ্কার) থাকলে এই ধান কৃষকের ঘরে উঠবে।’

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক প্রতুল সরকার বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৭০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে নন্দীগ্রাম জেলায় ২০ হাজার ৪৪৪ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে বোরো ধান। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন।

মাঠজুড়ে চলছে ধান কাটার ধুম। কেউ কাটছেন, কেউ আঁটি বাঁধছেন। রহমাননগর, নন্দীগ্রাম, বগুড়া। ২১ এপ্রিল। ছবি: সোয়েল রানা
মাঠজুড়ে চলছে ধান কাটার ধুম। কেউ কাটছেন, কেউ আঁটি বাঁধছেন। রহমাননগর, নন্দীগ্রাম, বগুড়া। ২১ এপ্রিল। ছবি: সোয়েল রানা

এ উপজেলার বেশির ভাগ জমিতে আগাম জাতের ধানের চাষ করা হয়েছে। কৃষকেরা মিনিকেট, ব্রি-ধান ৬২, ব্রি-ধান ২৮, ব্রি-ধান ৫৮, বীণা-৭ আবাদ করেছেন। গড়ে বিঘাপ্রতি ধানের ফলন হচ্ছে ২০ থেকে ২২ মণ।

নন্দীগ্রাম পূর্বপাড়া গ্রামের কৃষক আকরাম হোসেন জানান, তিনি ১৫ বিঘা জমিতে ধান করেছেন। তাঁর বড় ভাই ধান কাটা শুরু করেছেন। তাঁর নিজের জমির ধান কাটতে আরও চার-পাঁচ দিন অপেক্ষা করতে হবে বলে জানালেন।

ধান কেটে আঁটি বাঁধছেন তাঁরা। সকাল থেকেই মাঠে এই কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। রহমাননগর, নন্দীগ্রাম, বগুড়া। ২১ এপ্রিল। ছবি: সোয়েল রানা
ধান কেটে আঁটি বাঁধছেন তাঁরা। সকাল থেকেই মাঠে এই কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। রহমাননগর, নন্দীগ্রাম, বগুড়া। ২১ এপ্রিল। ছবি: সোয়েল রানা

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুশিদুল হক বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বোরোর ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকেরা ধানের বাজারমূল্যও পাচ্ছেন ভালো।

নন্দীগ্রাম উপজেলার রণবাঘা ধানের হাটের আড়তদার মাহবুব হোসেন বলেন, এই হাটে এখন গড়ে ২০ থেকে ৩০ ট্রাক ধান আমদানি হচ্ছে। আর এক সপ্তাহ পর থেকে শুরু হবে মৌসুম। ভরা মৌসুমে ৭০ থেকে ১০০ ট্রাক ধান আসবে এই হাটে। এখন মণপ্রতি ধান ৯০০ টাকায় বিক্রি হলেও মৌসুমে দাম কমে যাবে। তখন সাড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় মণপ্রতি ধান পাওয়া যাবে। ট্রাকের আকার অনুসারে একেক ট্রাকে ১৫ থেকে ২০ টন ধান থাকে বলে জানান তিনি।