বিচ্ছিন্ন হাতের খোঁজ মেলেনি, ছটফট করছে শিশুটি

দুর্ঘটনা
দুর্ঘটনা

মায়ের হাত ধরে মহাসড়ক পার হচ্ছিল আট বছরের সুমি খাতুন। হঠাৎ মায়ের হাত থেকে ছুটে যায় শিশুটি। হোঁচট খেয়ে পড়ে মহাসড়কে। নিয়তি এখানেই খারাপ। মুহূর্তে ছুটে আসা ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয় তার বাঁ হাত। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় কনুইয়ের ওপর থেকে।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শেরুয়া বটতলা এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে রোববার বেলা দেড়টায় মর্মস্পর্শী এ দুর্ঘটনা ঘটে। পথচারীরা শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠালেও শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া কচি হাতটির খোঁজ আর মেলেনি।

আহত সুমিকে প্রথমে শেরপুর উপজেলার দুবলাগাড়ি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং পরে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সুমি শেরপুর উপজেলার শাহ বন্দেগি ইউনিয়নের ফুলতলা দক্ষিণপাড়ার ভ্যানচালক দুলাল খানের মেয়ে। গ্রামের ব্র্যাক স্কুলে শিশু শ্রেণিতে পড়ে সে।

সন্ধ্যা ছয়টার দিকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নারী ও শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের বারান্দায় টয়লেটের পাশে একটি বিছানায় যন্ত্রণায় ছটফট করছিল শিশুটি। মাঝেমধ্যে মা মা বলে কাতরাচ্ছিল। কাটা হাতের ক্ষতস্থান ব্যান্ডেজ করা হলেও তাজা রক্তে ভিজে গিয়েছিল তা।

হাসপাতালে মেয়ের বিছানায় বসে নির্বাক তাকিয়েছিলেন মা মরিয়ম বেগম। মরিয়ম বলেন, তাঁর স্বামী হতদরিদ্র ভ্যানচালক। বাড়িতে ছোট একটা মুদি দোকানও রয়েছে। তিন মেয়ের মধ্যে সুমি সবার ছোট। রোববার দুপুরে এলাকার একটি দাওয়াতে তিনি সুমিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ সে হাত থেকে ছুটে হোঁচট খেয়ে মহাসড়কে ওপর পড়ে যায়। ওই সময় বগুড়ার দিক থেকে আসা একটি পাথরবাহী ট্রাক তার হাতের ওপর দিয়ে চলে যায়।

সন্ধ্যা ছয়টার দিকে শিশুটির খালু বাবু প্রামাণিক বলেন, ‘সুমিকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিকেল চারটার দিকে প্রথমে জরুরি বিভাগে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। এরপর একজন নার্স এসে এক ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করেন। ওই নার্স ছাড়া এখন পর্যন্ত কোনো চিকিৎসক সুমির খোঁজ নেননি, চিকিৎসাও দেননি। রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে ওয়ার্ডজুড়ে নার্সদের কাছে ছুটোছুটি করেছি, কেউ পাত্তা দিচ্ছে না।’

জানতে চাইলে ওই ওয়ার্ডের একজন নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রেজিস্ট্রার অনুযায়ী বেলা চারটায় শিশুটিকে জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। সাড়ে চারটায় তাকে ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। এই ওয়ার্ডে এই মুহূর্তে কোনো চিকিৎসক না থাকলেও রয়েছেন ৫ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানকার চিকিৎসক ইতিমধ্যেই শিশুটির কাগজপত্র দেখে চিকিৎসাও লিখে দিয়েছেন। এক ব্যাগ রক্ত দিতে বলেছেন। চিকিৎসা পেলেই রক্তক্ষরণ বন্ধ হবে।’

জানতে চাইলে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক নির্মলেন্দু চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসক নেই, এ অভিযোগ সঠিক নয়। শিশুটিকে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা দেখেই চিকিৎসা শুরু করেছেন। ওয়ার্ডে স্থানান্তরের পর কর্তব্যরত চিকিৎসকের চিকিৎসা দেওয়ার কথা। শিশুটির রক্তক্ষরণ বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, ঢাকায় দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানোর কয়েক দিন পর কলেজছাত্র রাজীব মারা যান। এরপর গোপালগঞ্জে বেপরোয়া বাসে হাত হারান হৃদয়।