উত্তরায় তুরাগ পরিবহনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে হয়রানি, বাস আটকে প্রতিবাদ

সহপাঠীকে যৌন হয়রানির চেষ্টার প্রতিবাদে তুরাগ বাস আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা। উত্তরা, ঢাকা, ২৩ এপ্রিল। ছবি: প্রথম আলো
সহপাঠীকে যৌন হয়রানির চেষ্টার প্রতিবাদে তুরাগ বাস আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা। উত্তরা, ঢাকা, ২৩ এপ্রিল। ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীতে চলাচলরত তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। চলন্ত বাসে সহপাঠীকে যৌন হয়রানি করার চেষ্টার প্রতিবাদে তুরাগ পরিবহনের ৩৫টি বাস আটকে রেখে প্রতিবাদ করেছে উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

অভিযুক্ত বাসচালক ও তাঁর সহকারীকে গ্রেপ্তারে কাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন তাঁরা। ব্যর্থ হলে আটকে রাখা বাসের কোনো ক্ষতির দায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা নেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

আজ সোমবার কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাঁদের দাবিদাওয়া তুলে ধরেন। বিক্ষোভরত ছাত্রদের পক্ষে পারভেজ হাসান সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চাইলেই দ্রুততার সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে পারে। তাঁরা সেটাই চাইছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত আসামি গ্রেপ্তার না হচ্ছে, তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এক প্রশ্নের জবাবে পারভেজ প্রথম আলো আলোকে বলেন, আটক বাস ফিরিয়ে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তাই বাসগুলো যেখানে ছিল, সেখানেই থাকবে।

উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী অভিযোগ করেন তুরাগ পরিবহনের গাড়িচালক ও তাঁর সহকারী তাঁকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করলে কৌশলে তিনি তাঁদের খপ্পর থেকে বেরিয়ে আসেন। ওই ঘটনায় ওই ছাত্রীর স্বামী রোববার বিকেলে বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি মামলাও করেন। ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে জানানোর পরই শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামেন। তাঁরা রোববার যাত্রাবাড়ী থেকে আবদুল্লাহপুরগামী তুরাগ পরিবহনের বাসগুলো উত্তরায় পৌঁছালেই সেগুলো থামিয়ে দেন। বাসের যাত্রীদের অন্য বাসে তুলে দিয়ে চালককে তাঁদের ক্যাম্পাসের কাছে বাস চালিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য করেন এবং বাসের চাবি কেড়ে নেন। আজ বিকেলের দিকে উত্তরার কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের সামনে সারি বেঁধে তুরাগ পরিবহনের বাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

সহপাঠীকে যৌন হয়রানির চেষ্টার প্রতিবাদে প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা। উত্তরা, ঢাকা, ২৩ এপ্রিল। ছবি: প্রথম আলো
সহপাঠীকে যৌন হয়রানির চেষ্টার প্রতিবাদে প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা। উত্তরা, ঢাকা, ২৩ এপ্রিল। ছবি: প্রথম আলো

আজ দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশ ও র‍্যাবের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সভায় উপস্থিতি পুলিশ ও র‍্যাবের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে বলেন, তাঁরা অভিযুক্ত গাড়িচালক ও তাঁর সহকারীদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা করছেন। আসামি গ্রেপ্তারে তাঁদের অভিযান অব্যাহত আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ফায়েজ এম সিরাজুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি ন্যায্য। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মতো পুলিশও তাদের সহযোগিতা করছে। এ ধরনের অপরাধের বিচার হওয়া প্রয়োজন।

আসামি গ্রেপ্তারের অগ্রগতি সম্পর্কে গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মুশতাক হোসেন বলেন, তাঁরা তিনটি বাস চিহ্নিত করেছেন। ঠিক কোন বাসটিতে ঘটনাটি ঘটেছে, নিশ্চিত হওয়া গেলেই অপরাধীকে শনাক্ত করা যাবে।


এ ঘটনায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও যথাযথ শাস্তি এবং ঘটনার শিকর ছাত্রীর ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।