সড়ক, নাকি বাজার?

মিরপুরের মাজার রোডের বড় একটি অংশ অস্থায়ী দোকানিদের দখলে। গতকালের ছবি।  প্রথম আলো
মিরপুরের মাজার রোডের বড় একটি অংশ অস্থায়ী দোকানিদের দখলে। গতকালের ছবি। প্রথম আলো

ফুটপাতে গড়ে তোলা হয়েছে স্থায়ী মুদি দোকান। আছে মাছ ও মুরগির দোকান। ফুটপাত ছাপিয়ে সড়কে বসছে সবজির বাজার। আছে পোশাকের দোকানও। দোকানগুলোতে চলছে জমজমাট বিকিকিনি।

মিরপুর ১ নম্বর গোলচত্বর থেকে গাবতলীর দিকে যাওয়া শাহ আলী মাজার সড়কের প্রায় আধা কিলোমিটার অংশের এই অবস্থা। এতে পথচারী ও যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে লোকজনকে।

স্থানীয় লোকজন বলেন, শাহ আলী মাজার সড়ক স্থায়ী কাঁচাবাজারে পরিণত হয়েছে। দোকানের কারণে ভোর থেকে শুরু করে রাত ১০টা পর্যন্ত সড়কটি একরকম অবরুদ্ধ হয়ে থাকে।

সম্প্রতি দেখা যায়, বাঁশ-কাঠ দিয়ে ফুটপাতে দোকান তৈরি করা হয়েছে। কোনো কোনো দোকানের ওপরে ত্রিপলের ছাউনি। কোনোটিতে ব্যবহার করা হয়েছে বড় আকারের ছাতা। বিক্রির পর ফুটপাতে কাটা হচ্ছে মাছ। আর রাস্তার দুটি লেনের মতো জায়গায় দখলে নিয়ে বসেছে কাঁচাবাজার। বাজার করতে আসা লোকজন ও তাঁদের গাড়ির কারণে রাস্তা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

ব্যবসায়ী ও দোকানিরা জানান, দোকানের আকার ও ব্যবসার ধরনভেদে প্রতিদিন দোকানগুলো থেকে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলেন বাজার নিয়ন্ত্রণকারীরা।

এক দোকানি বলেন, ‘লাইনম্যান আসে, টাকা লইয়া যায়। এখানে যারা দোকান করে, তারা সবাই টাকা দেয়। আমিও দেই। কিন্তু টাকা নিতে কে পাঠায়, এসবের কিছুই জানি না।’

সবজি ব্যবসায়ী আমানত শাহ বলেন, ‘রাস্তায় যারা দোকান বসায়, টাকা ওঠায়, তাদের আমরা লাইনম্যান বলে চিনি। কিন্তু তারা কার লোক, কে তাদের পাঠায়, এই সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘লাইনম্যানেরাই দোকান বসায়, দোকান থেকে টাকাও তারাই তোলে।’ আমানত শাহ বলেন, দৈনিক ১০০ টাকা চাঁদা দিয়ে তিনি পাঁচ বছরের মতো ব্যবসা চালাচ্ছেন।

সম্প্রতি এক ব্যক্তিকে দোকানিদের কাছ থেকে টাকা তুলতে দেখা যায়। ব্যবসায়ীরা তাঁকে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত দিচ্ছিলেন। পরে কথা হয় ওই ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি জানান, তাঁর নাম খোরশেদ আলম। ব্যবসায়ী ও দোকানিরা তাঁকে আলম ভাই বলে চেনেন। কিসের টাকা ওঠাচ্ছেন—জানতে চাইলে
খোরশেদ বলেন, ‘ভাই, এটা সমিতির জমার টাকা। সমিতির নাম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মালিক সমিতি।’ সমিতির জমা-উত্তোলনের খাতা কোথায়, আর কে কত টাকা জমা দিচ্ছেন, সেটা লিখছেন না কেন?—এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জমার টাকা নির্ধারিত। তাই লিখতে হয় না।’ সমিতির কার্যালয় কোথায়—জানতে চাইলে কথা না বলে সামনের দিকে চলে যান খোরশেদ।

বাজারের আশপাশের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, আলমই মূলত চাঁদা তোলার কাজটি করেন।

প্রতিদিন ওই পথে চলাচলকারী ব্যক্তিরা জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বেশির ভাগ রাস্তা দখলে নিয়ে বাজার বসানোর কারণে যানজট লেগে থাকে। দুপুরে মানুষ ও যানবাহনের চলাচল কম থাকায় রাস্তা কিছুটা ফাঁকা থাকে। অন্য সময় বাজারের ওই অংশটুকু পার হতেই আধা ঘণ্টা বা তার বেশি সময় লেগে যায়। এতে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

মিরপুর ১ নম্বরের সি-ব্লকের বাসিন্দা সাহাদত ইসলাম বলেন, ‘শাহ আলী মাজার সড়কে এলে বোঝা যাবে, ফুটপাত ও সড়ক দখল কাকে বলে? ফুটপাতের কোনো অস্তিত্ব এই সড়কে নেই।’

জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু উচ্ছেদের পরে ধরে রাখা সম্ভব হয় না। তখন একটা হাস্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।’ তিনি বলেন, ‘উচ্ছেদ অভিযানের পর উদ্ধার করা জায়গা দেখভালের দায়িত্ব ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও স্থানীয় থানার। কিন্তু ওয়ার্ড কাউন্সিলররা অনেক ক্ষেত্রে অসহায়। আর থানাল পুলিশ উচ্ছেদ করা জায়গা দেখভাল করে না বা করতে চায় না।’

এ বিষয়ে ডিএনসিসির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী টিপু সুলতান বলেন, শাহ আলী মাজার এলাকায় বাজার নির্মাণের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে রাস্তায় আর বাজার থাকবে না। তিনি বলেন, রাস্তা থেকে এলাকার লোকজন বাজার করেন। এতে এলাকাবাসীরই লাভ হয়।

দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিমুজ্জামান বলেন, তাঁর জানামতে সিটি করপোরেশন সম্প্রতি সড়কটিতে কোনো উচ্ছেদ অভিযান চালায়নি।