সভ্যতার সংঘাত এড়াতে একটা মধ্যপন্থা দরকার

আন্তর্জাতিক মিডিয়া সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ও ক্রিমিয়ার সরকারের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন দেশের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা। ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক মিডিয়া সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ও ক্রিমিয়ার সরকারের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন দেশের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা। ছবি : সংগৃহীত

রাশিয়ার মুসলিম প্রদেশ তাতারস্তানের প্রেসিডেন্ট রুস্তম মিন্নাখানভের নেতৃত্বাধীন গ্রুপ অব স্ট্র্যাটেজিক ভিশন-রাশিয়া ও ইসলাম আয়োজিত দুদিনের একটি আন্তর্জাতিক মিডিয়া সম্মেলন ক্রিমিয়ার ইয়াল্টা শহরে শেষ হয়েছে। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ও ক্রিমীয় সরকার এবং বিভিন্ন দেশের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা এতে বক্তব্য দেন।

বক্তারা এতে বলেছেন, পাঁচ শ বছর ধরে বিশ্বে একচেটিয়াভাবে পাশ্চাত্য সভ্যতার জয়জয়কার চলছে, যা বিশ্বের জন্য বৈষম্য, যুদ্ধ ও মানুষে মানুষে হানিহানি তীব্র করেছে। তাই মানবজাতির কল্যাণের স্বার্থেই এই পাশ্চাত্য সভ্যতার একচেটিয়া কর্তৃত্বের নিগড় থেকে মুক্তি দরকার। সে জন্য বিশ্বের বিভিন্ন অংশে বিরাজমান থাকা সভ্যতা ও সংস্কৃতির মধ্যে একটা যোগাযোগের সেতুবন্ধ গড়ে তোলা দরকার, যার লক্ষ্য হবে একটা মধ্যপন্থা খুঁজে বের করা। অন্যদিকে শান্তির ধর্ম ইসলামকে যারা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে চলেছে, তাদের সামনে ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরা দরকার। বক্তারা উল্লেখ করেন, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে খ্রিষ্টান ও মুসলিমরা সংখ্যায় সমান হবে। কিন্তু উদ্বেগজনক হলো, এখন তাদের মধ্যে যেমন প্রবণতা আছে, তখনো তেমনই প্রবণতা বজায় থাকবে।

সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণে তাতারস্তানের প্রেসিডেন্ট রুস্তম মিন্নাখানভ ক্রিমিয়া প্রশ্নে রাশিয়ার ওপর তাঁর ভাষায়, পাশ্চাত্যের আরোপিত ধ্বংসাত্মক নিষেধজ্ঞা মোকাবিলা এবং আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ উপায় খোঁজার বিষয়ে গণমাধ্যমকে ভূমিকা রাখতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এই লক্ষ্য সামনে রেখেই প্রেসিডেন্ট পুতিন গ্রুপ অব স্ট্র্যাটেজিক ভিশনকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। এই গ্রুপের সমন্বয়ক জ্যেষ্ঠ রুশ রাষ্ট্রদূত ভিভি পপভ বলেন, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, বিজ্ঞান, কলায় রাশিয়া ও মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা এবং সভ্যতার অংশীদারত্বের জন্য নতুন নীতি ঠিক করাই গ্রুপ অব স্ট্র্যাটেজিক ভিশনের লক্ষ্য।
সম্মেলনে বাংলাদেশ, রাশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, মিসর, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়াসহ ৫০ টির বেশি দেশের সাংবাদিকেরা অংশ নেন। সিমফেইরোপোল বিমানবন্দর থেকে ঐতিহাসিক নগরী ইয়াল্টার দূরত্ব এক শ কিলোমিটারের বেশি। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পরিস্থিতি আলোচনার জন্য এখানেই স্তালিন, চার্চিল ও রুজভেল্ট (ওই সময়ে রুশ, ব্রিটিশ ও মার্কিন শীর্ষ নেতা) বৈঠক করেছিলেন। বেশ কিছু ছোট-বড় শহর এই সড়কের ওপর রয়েছে। কিন্তু দুদিনের যাতায়াতে কোথাও কোনো সৈন্য চলাচল বা পুলিশ বা কোনো ধরনের নিরাপত্তাজনিত কড়াকড়ি চোখে পড়েনি।

২৪ এপ্রিল সকালে সাংবাদিকেরা ক্রিমিয়ার বাখচিছরাই শহরে অবস্থিত পঞ্চদশ শতকের মুসলিম তাতার শাসকদের প্রাসাদ পরিদর্শন করেন। তুরস্কের বিখ্যাত সুলতান সুলেমান এই খান বংশেরই দৌহিত্র। অটোমান, পারস্য ও ইতালীয় স্থাপত্যরীতিতে তৈরি এই প্রাসাদের চত্বরে রয়েছে ক্রিমিয়ার অন্যতম বৃহত্তম মসজিদ। চোখে পড়ল এই মসজিদটির সংস্কার চলছে।