ন্যাপের বিভক্ত অংশকে এক জোট হওয়ার আহ্বান

ঐক্য ন্যাপের জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দলের নেতারা। ছবি: প্রথম আলো
ঐক্য ন্যাপের জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দলের নেতারা। ছবি: প্রথম আলো

ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির বিভিন্ন খণ্ডিত দলে বিভক্ত নেতা কর্মীদের এক জোট হয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে ঐক্য ন্যাপ। এ লক্ষ্যে আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে ‘ঐক্য’ শব্দটি বাদ দিয়ে শুধু ‘ন্যাপ’ গঠন করা হবে।

গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন (আইইবি) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ঐক্য ন্যাপের জাতীয় সম্মেলন ও কাউন্সিলের (২০১৮) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই আশা ব্যক্ত করেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য।

অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক জাতীয় ঐক্য এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় এবারের সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে দেশের ৫০টি জেলা থেকে ঐক্য ন্যাপের নেতা-কর্মীরা যোগ দেন। বিভিন্ন দল থেকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা ঐক্য ন্যাপের সম্মেলনে সংহতি জানান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে ন্যাপ বিভক্ত হয়েছে, যা দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। আজ ঐক্য ন্যাপের সম্মেলন হচ্ছে। আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে শুধু ন্যাপের সম্মেলন হবে, ‘ঐক্য’ বাদ যাবে। এই উচ্চারণের মধ্য দিয়ে আমি আহ্বান জানাচ্ছি সবাই এক হয়ে যান। কোনো বাধা থাকবে না। পদত্যাগ করতেও আমার একটুও দেরি হবে না।’

পঙ্কজ ভট্টাচার্য তাঁর বক্তব্যে দ্রব্যমূল্য কমানো, অকৃষি খাতে কৃষি জমির ব্যবহার নিষিদ্ধ, কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা, শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা প্রদান, নারীর প্রতি বৈষম্য দূর, দুর্বৃত্তদের হাত থেকে ভূমি-জলাধার-নদী রক্ষার দাবি তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে বিভাজন বিভিন্ন সময়ে বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইকে দুর্বল করেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্পদ কিছু লোকের হাতে পুঞ্জীভূত হচ্ছে, এটা সত্য। বৈষম্য বহু পরিমাণ বেড়ে গেছে। অর্থনীতিতে দেশ এগিয়ে গেলেও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বেড়ে গেছে। সাম্প্রদায়িক মানসিকতাও সবক্ষেত্রে বেড়ে যাচ্ছে।’

সম্মেলনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘ন্যাপের সম্মেলনে এসে মনে হচ্ছে, এটা সিপিবিরই সম্মেলন। কারণ দুই দলেরই নীতি আর আদর্শ প্রায় এক। তিনি সিপিবি, ন্যাপসহ সব বামপন্থী দলকে এক জোট হয়ে দেশে বিদ্যমান বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আরও বলেন, দেশে আজ কী হচ্ছে-স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু কম্বল চোরদের বিরুদ্ধে বলেছিলেন। আজ শাসকদলের নেতৃবৃন্দ দেশে ব্যাংক লুটেরাদের বিরুদ্ধেও বলছেন না।

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, মুক্তিযুদ্ধের শক্তি ক্ষমতায় থাকলেও আজ অসহায় অবস্থায় আছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতির চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা সম্মেলনে সংহতি জানিয়ে বলেন, সরকার দাবি করে যে, দেশ আজ গণমানুষ ও গণমুখী শাসন ব্যবস্থায় । আসলে কি তাই? পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি আছে, এটা আজ জ্বলন্ত মিথ্যার বেসাতি।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের পাশে বামপন্থী দলগুলোকে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, ঐক্য ন্যাপের স্লোগান বিষয়ে ভিন্নমত নেই। দেশের অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতির মোকাবিলায় সবাইকে এক জোট হতে হবে।