অধিদপ্তরকে বাহিনী করা নিয়ে আপত্তি পুলিশের

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামালউদ্দীন আহমেদ এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, মাদক অপরাধ দমনে অনেক বাহিনী; সবাই সবার পরিপূরক হিসেবে কাজ করছে। এখানে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে বাহিনী করা হলে কারও সমস্যা হওয়ার কথা না। এখন এ অধিদপ্তরে বাড়তি জনবল, সরঞ্জামাদি যুক্ত করে আরও কার্যকর করার উদ্যোগ চলছে। এই অধিদপ্তর বাহিনী হলে কাজের গতি আরও বাড়বে।

আর এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম বিভাগে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

অপচয় বলছে পুলিশ

পুলিশের প্রস্তাবে খসড়া আইনটির ৭-এর ৩ ধারা সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। ওই ধারাটিতে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে একটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা (এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি) হিসেবে গণ্য করার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই সংস্থার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র, পোশাক, র‍্যাংক ব্যাজ অর্থাৎ একটি বাহিনীর পোশাকে যেসব আনুষ্ঠানিকতা থাকে, সেসব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

কিন্তু পুলিশ বলছে, বাংলাদেশের মাদক নিয়ন্ত্রণে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশের সহায়তাকারী হিসেবে আনসার-ভিডিপি কাজ করে যাচ্ছে। এই অবস্থায় সম্পূর্ণ নতুন একটি বাহিনী তৈরি করলে মাঠপর্যায়ের অন্যান্য বাহিনী নিরুৎসাহিত হতে পারে।

পুলিশের লিখিত প্রস্তাবে নতুন বাহিনীর জন্য বরাদ্দকে অপচয় হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, নতুন কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তৈরির চেয়ে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ পুলিশ বাহিনী এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণে অধিক কার্যকর। সেখানে বলা হয়েছে, পুলিশের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে মাদক ব্যবসায়ীরা সাধারণত সবার অলক্ষ্যে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করেন। যার ফলে পোশাকি (ইউনিফরমধারী) বাহিনীর পরিবর্তে সাদাপোশাকে মাদকবিরোধী অভিযান বেশি ফলপ্রসূ হয়।

লাইসেন্সের যাচাইয়েও ক্ষমতা চায় পুলিশ

মদের বিক্রয়কেন্দ্র বা বার, মদপানের অনুমোদন (পারমিট) ইত্যাদি দেওয়ার এখতিয়ার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের। এসবের জন্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাই প্রাক্‌-যাচাইয়ের কাজটি করে থাকেন। খসড়া আইনটির সংশোধন প্রস্তাবে পুলিশ এসবের ক্ষেত্রে পুলিশ সুপার, বিশেষ শাখার মাধ্যমে যাচাই করে লাইসেন্স দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। একই সঙ্গে মাদক আইনে লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি বা পরিদর্শনের ক্ষমতাও চেয়েছে পুলিশ। এত দিন কেবল মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাই এ কাজটি করে আসছেন।

দুটি শব্দ বাতিলের প্রস্তাব

খসড়া আইনের ৩৭ ধারায় লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোতে তল্লাশি ও অভিযান পরিচালনার বিষয়ে বাধা-নিষেধ রয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ‘লাইসেন্স প্রেমিজেস’ শব্দ দুটি বাতিল করার কথা বলা হয়েছে। পুলিশের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রায়ই লাইসেন্সের আড়ালে নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার অনুমতি থাকা আবশ্যক।

ঢাল-তলোয়ারবিহীন আর কত দিন?

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা আর ঢাল-তলোয়ারবিহীন ‘নিধিরাম সর্দারে’র মতো থাকতে চান না। অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক থেকে অতিরিক্ত পরিচালক পর্যন্ত চারজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলছেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে বিবেচিত হলে তাঁরা অস্ত্র ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি পেলে কাজের গতি বাড়বে। এতে অন্য বাহিনীগুলোর নিরুৎসাহিত হওয়ার কিছু নেই।

একটি জেলায় কর্মরত একজন সহকারী পরিচালক বলেন, জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সভায় যখনই মাদকের কথা ওঠে, তখন সবাই মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকেই দোষারোপ করে। কিন্তু পুরো জেলায় সব মিলিয়ে তাঁরা ছয়জন কাজ করেন। কোনো অস্ত্র নেই, গাড়ি নেই।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অধিদপ্তরের মহাপরিচালক থেকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পর্যন্ত সব মিলিয়ে মোট জনবল ১ হাজার ১৯১ জন। এ জনবল নিয়ে ২০১৭ সালে সংস্থাটি ১১ হাজার ৬৫১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে, মামলা হয়েছে ১১ হাজার ৬১২টি। আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, পুলিশ ওই বছর ১ লাখ ৬ হাজার মাদকের মামলায় ১ লাখ ৩২ হাজার জনকে গ্রেপ্তার করেছে।