স্বামীর অবৈধ আয় সম্পর্কে না জেনেই আসামি হচ্ছেন স্ত্রী: দুদক

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। প্রথম আলো ফাইল ছবি
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। প্রথম আলো ফাইল ছবি

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, স্বামীর অবৈধ আয়ে স্ত্রীর নামে সম্পদ অর্জনসংক্রান্ত ৯০ শতাংশ মামলায় স্ত্রী এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। অথচ আইনে ওই কিছুই না-জানা নারীকেই আসামি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আইনি কাঠামোর মধ্য থেকেই এ ধরনের নারীদের সুরক্ষা দেওয়ার কথা চিন্তা করছে দুদক।

২০১৫ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত এ ধরনের ১১৮টি মামলার কথা উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘নারীরা ভিকটিম হয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টিতে কোনো সমাধানে আসতে পারিনি। যিনি জানেন না, তাঁকে কেন আসামি করব? দেড় বছর আগের মামলাগুলো ভাবিয়ে তুলেছে। সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে বিভিন্ন নারী সংগঠন এবং মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও কথা বলেছি। অন্তত আলোচনাটা শুরু হোক এবং চলুক।’

আজ রোববার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত ‘দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয় ও সম্পদের পারিবারিক দায়, নারীর ভূমিকা, ঝুঁকি ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুদকের চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘গত দুই বছরের মধ্যে আমরা একজন নারীকে পেয়েছি, যিনি স্বামীর অবৈধ আয় সম্পর্কে জানেন বলে জানিয়েছেন।’

স্বামী বা পরিবারের পুরুষ সদস্যদের অবৈধ আয় সম্পর্কে নারীদের সচেতন হওয়ার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, মামলায় অভিযুক্ত নারীরা বলছেন তাঁরা কিছু জানেন না, কিন্তু কাগজে তাঁদের সই আছে। তাঁরাও পরিচালক বা অন্য কোনো পদে আছেন। তাই নারীদের সচেতন হতে হবে। ব্যাংক চেক বা খালি চেকে সই করার আগে জানতে হবে তিনি কেন সই দিচ্ছেন। দুদকের ১০৬ নম্বরে অভিযোগ জানানো যায় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সভায় দুদকের বিভিন্ন পরিসংখ্যান নিয়ে টিআইবির করা একটি কার্যপত্র উপস্থাপন করেন টিআইবির প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাম্মী লায়লা ইসলাম। এতে বলা হয়েছে, গত এক যুগে দুদকে দায়ের করা ২৯টি মামলায় ২৯ জন নারীকে স্বামীর দুর্নীতির কাজে সহযোগিতা বা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন বা তথ্য গোপনের অভিযোগে আদালত কারাদণ্ড এবং আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। ২৯ জনের মধ্যে ২৬ জনকেই স্বামীর দুর্নীতিতে সহায়তা করার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেওয়া হয়েছে। ২৫ জন তিন বছর এবং একজনকে দুই বছরের সাধারণ কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত প্রায় সব কটি মামলাতেই অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়, যার পরিমাণ ৫০ লাখ থেকে ৮০ কোটি টাকা পর্যন্ত।

সভায় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানও অবৈধ সম্পদের দায় যাতে নারীকে নিতে না হয়, সে জন্য নারীর সচেতনতার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন। একইভাবে নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ক্ষমতায়ন জরুরি বলে উল্লেখ করেন। দুদকের পক্ষ থেকেও ক্যাম্পেইন বা প্রচারের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তিনি।

আলোচনায় অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, অনেকেই বলে থাকেন, ওই ব্যক্তির ঘুষ না খেয়ে উপায় ছিল না। তাঁর স্ত্রী খুব ‘ডিমান্ডিং’। এই স্বামীরা কিন্তু স্ত্রীদের অন্য কোনো কথা শোনেন না, শুধু দুর্নীতির বেলায় স্ত্রীর বাধ্য হয়ে যান।

সভায় নারীনেত্রী খুশী কবির, রোকেয়া কবীর, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের দেশীয় পরিচালক ফারাহ কবির, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আইনজীবী তানবীর সিদ্দিক প্রমুখ অংশ নেন।

সভায় উপস্থিত আলোচকদের মধ্যে কয়েকজন স্বামী বা পরিবারের পুরুষ সদস্যের অবৈধ সম্পদে নারী শুধুই ভিকটিম হচ্ছেন, তা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেন। তাঁদের মতে, যে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে, তাঁদের স্ত্রীরাও শিক্ষিত। তাই কিছুই না জেনে তাঁরা তা সই করছেন, তা বলার উপায় নেই।