পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচলের দিনেই রেল চলবে: রেলমন্ত্রী

পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরসহ প্রকল্পের সার্বিক অবস্থা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। রেল ভবন, ঢাকা, ৬ মে। ছবি: ফোকাস বাংলা
পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরসহ প্রকল্পের সার্বিক অবস্থা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। রেল ভবন, ঢাকা, ৬ মে। ছবি: ফোকাস বাংলা

পদ্মা সেতু দিয়ে যেদিন যানবাহন চলাচল শুরু হবে, সেদিনই এই সেতু দিয়ে রেল চলাচল শুরু হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের এক্সিম ব্যাংক অব চায়নার সঙ্গে ইতিমধ্যে ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার (২ হাজার ৬৬৭ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ।

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর রেলভবনের সম্মেলন কক্ষে পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরসহ প্রকল্পের সার্বিক অবস্থা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এসব কথা জানান।

মো. মুজিবুল হক বলেন, ‘গত ২৭ এপ্রিল বেইজিংয়ে বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জাহিদুল হক ও এক্সিম ব্যাংক অব চায়নার ভাইস প্রেসিডেন্ট সুন পিং এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। এর মাধ্যমে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচিত হলো।’

রেলপথমন্ত্রী বলেন, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় দেশে রেলপথ ছিল সবচেয়ে অবহেলিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিগত দুই মেয়াদে রেলের উন্নয়নে যুগান্তকারী প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে রেল এখন জনবান্ধব এবং যাত্রী পরিবহন বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন রেল আর অবহেলিত নয়। ট্রেনের গতি বিএনপির আমলে ছিল কম। শেখ হাসিনার সরকার রেলকে গুরুত্ব দিয়ে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করেছে। এখন রেল নির্দিষ্ট সময়ে যাওয়া-আসা করে।

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা রেলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্প গ্রহণ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা ঢাকা-চট্টগ্রাম বুলেট ট্রেন নির্মাণের জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছি।’ মো. মুজিবুল হক বলেন, ‘শিগগিরই এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সামারি পাঠাব। প্রধানমন্ত্রী যেদিন সময় দেবেন, সেদিন এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে।’ তিনি বলেন, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জনগণের কাছে এখন আর স্বপ্ন নয়, এটা এখন বাস্তব। পদ্মা সেতু দিয়ে যেদিন প্রথম যানবাহন চলাচল করবে, সেদিনই সেতুর ওপর দিয়ে রেল চলাচল করবে—এ লক্ষ্য নিয়ে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে চীনের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগের ফলে মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। রেলপথ চালু হলে এসব জেলাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সব মানুষের উন্নয়ন হবে। দ্রুত রেলপথের কাজ শুরু করা হবে বলেও জানান তিনি। রেলপথমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ঢাকা থেকে যশোরের দূরত্ব ৩৫৬ দশমিক ৪০ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এ দূরত্ব দাঁড়াবে মাত্র ১৭০ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার। ১৮৫ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যাবে। বর্তমানে ঢাকা থেকে খুলনার দূরত্ব ৪১২ দশমিক ৪০ কিলোমিটার। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঢাকা থেকে খুলনার দূরত্ব দাঁড়াবে ১৯৯ দশমিক ১৩ কিলোমিটার। এ পথের দূরত্ব কমবে ২১৩ দশমিক ২৭ কিলোমিটার। বর্তমানে ঢাকা থেকে ট্রেনে চড়ে খুলনা যেতে সময় লাগে নয় ঘণ্টা। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পর সময় লাগবে মাত্র চার ঘণ্টা।

রেলপথমন্ত্রী বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড’-এর সঙ্গে ২৭ হাজার ৬৫২ কোটি ৫৭ লাখ টাকার কমার্শিয়াল চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। প্রকল্পের আওতায় মোট ২১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে, যার মধ্যে প্রায় ২৩ কিলোমিটার উড়াল (এলিভেটেড) রেলপথ। এমনকি কেরানীগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনটিও উড়াল রেলপথে নির্মিত হবে। এ সেকশনে ১৪টি নতুন রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করা হবে এবং বিদ্যমান ছয়টি স্টেশন নবায়ন করা হবে। তা ছাড়া এ সেকশনে নতুন ট্রেন পরিচালনার জন্য ১০০টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহ করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রেলপথসচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন, রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন, অতিরিক্ত সচিব (প্রকল্প পরিচালক) গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জাহিদুল হক, প্রকল্পের সুপারভিশন পরামর্শক মেজর জেনারেল সাঈদ মাসুদ প্রমুখ।